বাংলা কাব্য সাহিত্যে রবীন্দ্র-পরবর্তী কবিদের রোমান্টিক কবি হলেন অজিত দত্ত। মূলত ‘কল্লোল যুগ’ এর রবীন্দ্র প্রভাবমুক্ত সাহিত্য আন্দোলনের শরিক ...
বাংলা কাব্য সাহিত্যে রবীন্দ্র-পরবর্তী কবিদের রোমান্টিক কবি হলেন অজিত দত্ত। মূলত ‘কল্লোল যুগ’ এর রবীন্দ্র প্রভাবমুক্ত সাহিত্য আন্দোলনের শরিক হিসেবে বাংলা কাব্যে তাঁর আবির্ভাব ঘটলেও তিনি উগ্র রবীন্দ্রবিরোধী ছিলেন না।
পরিচয় :
১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা শহরে কবির জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম অতুলকুমার দত্ত এবং মাতার নাম হেমালিনী দেবী। অভাব ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে তাঁর শৈশব কাটলেও ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা থেকে এম এ পাস করেন। ঢাকা ও কলকাতার বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করার পর তিনি সবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শেষ করেন। তাঁর বিদ্যালয়জীবনের অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন বুদ্ধদেব বসু। তখন থেকেই এই কবি-প্রাবন্ধিক সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে কবি অজিত দত্তের সখ্য। সমকালে কবি অজিত দত্ত অন্য কবিদের মতো বিদ্রোহ বা প্রতিবাদের রাস্তায় না-হেঁটে জীবনকে নারীপ্রেমের আনন্দময় প্রবাহে ভাসিয়ে পরমপ্রশাস্তি ও নির্জনতার আনন্দ উপভোগ করার ক্ষেত্রে যত্নবান হয়েছিলেন।কবি অজিত দত্তের কাব্যভাবনায় হতাশা কিংবা নৈরাশ্য থাকলেও শেষমেশ তা জীবনবাদী চেতনায় ধ্বনিত হয়েছে। কবির দৃষ্টি ভাববাদী ও রোমান্টিক; তবে প্রকাশভঙ্গি সহজ সরল। ভাষার পরিমিতি ব্যবহারে, ব্যঞ্জনায় সংযত এই কবি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউ-এর বাড়িতে দেহত্যাগ করেন।
ছদ্মনাম :
- ‘রৈবতক’
রচনাসমূহ :
- অজিত দত্তের প্রথম রচনা - ‘কুসুমের মাস’ (১৯৩০) ।
কাব্য সংকলন :
কবি অজিত দত্তের কাব্য সংকলনের সংখ্যা মোট আটটি । কাব্য সংকলনগুলি হল :
- ‘কুসুমের মাস’ (১৯৩০),
- ‘পাতালকন্যা' (১৯৩৮),
- ‘নষ্টচাঁদ' (১৯৪৫),
- 'পুনর্নবা' (১৯৪৬),
- 'ছড়ার বই' (১৯৫০),
- ‘ছায়ার আলপনা' (১৯৫১)
- 'জানালা' (১৯৫৯) এবং
- 'সাদা মেঘ কালো পাহাড়' (১৯৭১)।
প্রবন্ধগ্রন্থ :
- ‘জনান্তিকে’ (১৯৪৯)
- ‘মন পবনের নাও’ (১৯৫০)
- ‘বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস’ (১৯৬০)
- ‘সরস প্রবন্ধ’ (১৯৬৮)
(‘জনান্তিকে ও ‘মন পবনের নাও’ - ‘রৈবতক’ ছদ্মনামে রচনা করেন)
অজিত দত্তের কাব্য বৈশিষ্ট্য:
(১) অজিত দত্ত ছিলেন সংস্কৃত সাহিত্যের তথা প্রাচ্য সাহিত্যের ঐতিহ্যানুসারী।
(২) প্রকৃতি ও নারীকে অখণ্ডরূপে দেখে মূলত তিনি রোমান্টিক প্রেমের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হেয়েছেন ।
(৩) বাংলা কাব্যে যে কতিপয় কবি সনেট রচনায় দক্ষ, তার মধ্যে অন্যতম হলেন কবি অজিত দত্ত।
(৪) অজিত দত্ত জীবনের মহিমাকে তিনি ভালোবেসেছেন অন্তর দিয়ে, আর হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন প্রেমের বেদনাকে।এর প্রমাণ ‘কুসুমের মাস’ নামক কবিতাতেই পাওয়া যায়:
“আমিও কুসুমপ্রিয়। আজিকে তো কুসুমের মাস। মোর হাতে হাত দাও, চলো যাই কুসুম-বিতানে। বসিয়া নিভৃত কুঞ্জে কহিব তোমার কানে কানে, কোন্ ফুলে ভরিয়াছে জীবনের মধু অবকাশ।”

No comments