জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা সাহিত্যর অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় । ১৯৩৩ সালে ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহরুতে কবি শ...
জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা সাহিত্যর অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় । ১৯৩৩ সালে ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহরুতে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় । তার পিতা বামানাথ চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা কমলাদেবী । কবির শৈশবের কিছুটা অংশ কেটেছে তার মামার বাড়িতে । চল্লিশের দশকে তিনি কলকাতার বাগবাজারে মামার বাড়িতে থাকতেন । কবির প্রথম চাকরি ছিল " ক্লারিয়ণ " নামক এক বিজ্ঞাপন কোম্পানিতে কপিরাইটার কাজ । পরবর্তীকালে তিনি " ভারবি " প্রকাশনা সংস্থায় যোগ দেন । ১৯৯৫ সালে ২৩ মার্চ শান্তিনিকেতনে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু ঘটে ।
ছদ্মনাম :
প্রথম রচনা :
(a) প্রথম রচনা - ‘নিরুপমের দুঃখ’ ।
(b) প্রথম কাব্যগ্রন্থ - ‘হে প্রেম হে নৈশব্দ’ (১৯৬১) ।
(c) প্রথম উপন্যাস - ‘কূয়োতলা’ (১৯৬১) ।
(d) প্রথম মুদ্রিত কবিতা - ‘যম’ (বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়) ।
(e) প্রথম প্রবন্ধ সংকলন - ‘রূপকথার কলকাতা’ (১৯৬৫) ।
কবিতা সংকলন:
- ‘হে প্রেম, হে নৈঃশব্দ' (১৯৬১),
- ‘ধর্মেও আছো জিরাফেও আছো' (১৯৬৫),
- ‘অনন্ত নক্ষত্রবীথি তুমি অন্ধকারে’ (১৯৬৬),
- 'সোনার মাছি খুন করেছি' (১৯৬৭),
- 'হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’ (ফাল্গুন, ১৩৭৫),
- 'চতুদর্শপদী কবিতাবলী' (১৯৭০),
- 'পাড়ের কাথা, মাটির বাড়ি’ (১৯৭১),
- ‘প্রভু নষ্ট হয়ে যাই’ (শ্রাবণ, ১৩৭৯),
- ‘সুখে আছি’ (বৈশাখ, ১৩৮১)
- ‘ঈশ্বর থাকেন জলে’ (১৯৭৫),
- 'জ্বলন্ত রুমাল' (১৯৭৫),
- 'অস্ত্রের গৌরবহীন একা' (১৯৭৫),
- ‘ছিন্নবিচ্ছিন্ন’ (১৯৭৫),
- 'সুন্দর এখানে একা নয়' (১৯৭৬),
- ‘আমি ছিঁড়ে ফেলি ছন্দ, তন্তুজাল’ (১৯৭৬),
- 'কবিতার তুলো ওড়ে' (১৯৭৭),
- 'এই আমি যে পাথরে’ (১৯৭৭),
- 'হেমন্ত যেখানে থাকে (১৯৭৭),
- ‘পাতাল থেকে ডাকছি' (১৯৭৭),
- 'উড়ন্ত সিংহাসন' (১৯৭৮),
- 'পরশুরামের কুঠার' (১৯৭৮),
- ‘মানুষ বড়ো কাদছে’ (১৯৭৮),
- ‘ভালোবেসে ধুলোয় নেমেছি' (১৯৭৮),
- 'ভাত নেই, পাথর রয়েছে (১৯৭৯),
- 'আমাকে দাও কলা' (১৯৮০),
- 'আমি চলে যেতে পারি' (১৯৮০),
- ‘মন্ত্রের মতন আছি স্থির’ (১৯৮০),
- ‘অঙ্গুরী তোর হিরণ্য জল' (১৯৮০),
- 'আমি একা বড়ো একা’ (১৯৮১),
- 'প্রচ্ছন্ন স্বদেশ’ (১৯৮২),
- ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো' (১৯৮২),
- ‘পুণ্যি পুকুর পুষ্করিণী’ (১৯৮২),
- ‘কোথাকার তরকারি কোথায় রেখেছে’ (১৯৮৩),
- ‘কক্সবাজারে সন্ধ্যা' (১৯৮৪),
- 'সে প্রতিচ্ছবি’ (১৯৮৪),
- ও চিরপ্রণম্য তার 'অগ্নি' (১৯৮৫),
- 'মিষ্টি কথায় বিষ্টিতে নয়’ (১৯৮৫),
- 'সন্ধ্যার সে শাস্ত উপহার’ (১৯৮৬),
- 'আমাকে জাগাও' (১৯৮৬),
- 'এই তো মর্মর মূর্তি’ (১৯৮৭),
- 'বিষের মধ্যে সমস্ত লোক' (১৯৮৭),
- 'ছবি আঁকে ছিঁড়ে ফ্যালে’ (১৯৯১),
- ‘পাতালে টেনেছে আজ’(১৯৯১)
- ‘জঙ্গল বিষাদে আছে’ (১৯৯৫),
- ‘কিছু মায়া রয়ে গেলো',
- 'মানুষ বড়ো কাঁদছে,
- ‘সকলে প্রত্যেকে একা'
- 'তিন তরঙ্গ' (১৯৬৪) - সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের সঙ্গে যৌথ সংকলন,
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যুগলবন্দী’ (১৯৭২),
- 'সুন্দর রহস্যময়' (১৯৮০) ।
অনুবাদ :
- ওমর খৈয়ামের রুবাই' (১৯৬৯),
- 'কালিদাসের মেঘদূত' (১৯৭২),
- আয়ান রশিদের সঙ্গে 'গালিবের কবিতা' (১৯৭৫),
- 'পাবলো নেরুদার প্রেমের কবিতা’ (১৯৭৬)
- ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (১৯৮৮) ইত্যাদি।
সম্পাদিত পত্রিকা :
- ‘নবোদয়’
- ‘বহ্নিশিখা’
আলোচনা :
হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য :
- এটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
- কবিতার সংখ্যা ৭২।
- এই গ্রন্থের কবিতাগুলি রচিত হয়েছিল অন্তত দু'বছর পূর্বে। কিন্তু দু-দুবার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে যায়, একবার হারায় সমস্ত মুদ্রিত ফর্মা।
- এই কাব্যের নাম - 'যম' > 'নিকষিত হেম'> 'কেলাসিত স্ফটিক' > ‘হে প্রেম হে নৈশব্দ ।
- নামের পরিবর্তন অনুযায়ী পৃথ্বীশকেও তিন-তিনবার প্রচ্ছদ আঁকতে হয়েছিল।
- এই গ্রন্থেরই অশুদ্ধি সংশোধন অংশে নিজের কবিতা সম্পর্কে 'পদ্য' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করতে দেখা যায় তাঁকে। উৎসর্গের উদ্ধৃতিটি বুদ্ধদেব বসু-কৃত বোদলেয়ারের অনুবাদ থেকে গৃহীত।
কুয়োতলা :
- এটি শক্তির প্রথম উপন্যাস।
- 'হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য' কাব্যের পূর্বে উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল, কিন্তু প্রকাশিত হয় পরে।
- দক্ষিণবঙ্গের বহড়ু গ্রামে বড়ো হয়ে ওঠা নিরুপম বা নিরু নামের একটি নিঃসঙ্গ ও অনুভূতিপ্রবণ বালকের কাহিনী নিয়ে এই উপন্যাস রচিত।
- রূপচাঁদ পক্ষী ছদ্মনামে রচিত প্রবন্ধসংগ্রহ।
- রচনার সংখ্যা ৩২।
- গ্রন্থের বিষয় কলকাতা শহরের নানা বর্ণনা।
- রচনাগুলি সবই আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাব্য বৈশিষ্ট্য :
১) বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনার মেলবন্ধনে কবিতা নতুন শক্তি লাভ করেছ ।
২) কাব্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যুগ যন্ত্রণা।
৩) নিসর্গ, পথ, সমুদ্র, নারী - সর্বোপরি মানুষের প্রতি ভালোবাসাই তাঁর কাব্যের মূল উপজীব্য।
৪) তাঁর কবিতায় হাংরি আন্দোলনের বাস্তব সমস্যা ফুটে উঠেছে।
৫) অকপট সরলতার পাশাপাশি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় অনেক অকাব্যিক বিষয় স্থান পেয়েছে।

No comments