Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

মনসামঙ্গলের কবি বিজয় গুপ্তঃ

মনসামঙ্গলের একজন সর্বাধিক প্রচারিত কবি হিসাবে বিজয়গুপ্তের খ্যাতি। বিজয় গুপ্তের কাব্য পূর্ববঙ্গে সর্বাধিক প্রচারিত হয়েছিল । গল্পরস সৃজনে,...


মনসামঙ্গলের একজন সর্বাধিক প্রচারিত কবি হিসাবে বিজয়গুপ্তের খ্যাতি। বিজয় গুপ্তের কাব্য পূর্ববঙ্গে সর্বাধিক প্রচারিত হয়েছিল । গল্পরস সৃজনে, করুণরস ও হাস্যরসের প্রয়োগে, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক জীবনের পরিচয়ে, চরিত্র চিত্রণে এবং পাণ্ডিত্যের গুণে বিজয়গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’ একটি জনপ্রিয় কাব্য।

     বিজয় গুপ্তের ব্যক্তিগত পরিচয়ঃ     
        বরিশাল জেলার গৈল্লা ফুল্লশ্রী গ্রামের এক বৈদ্য পরিবারে কবির জন্ম। কবির পিতার নাম সনাতন, মাতা রুক্মিণী। কথিত আছে, বিজয় গুপ্ত নিজের গ্রামে মনসার মন্দির ও মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। কবির পরিবারে সংস্কৃত-চর্চা হত। কবিরা ছিলেন বৈষ্ণব। ব্যক্তিগত পরিচয় দিতে গিয়ে কবি জন্মভূমি ফুল্লশ্রীকে পণ্ডিতনগর বলেছেন।

    বিজয় গুপ্তের কাব্য পরিচয়ঃ   
        বিজয় গুপ্তের কাব্যের নাম ‘পদ্মাপুরাণ’ । কাব্যটি পূর্ববঙ্গের অধিক পরিচিত কাব্যগুলির মধ্য অন্যতম। গল্পরস সৃজনে, করুণরস ও হাস্যরসের প্রয়োগে, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক জীবনের পরিচয়ে, চরিত্র চিত্রণে এবং পাণ্ডিত্যের গুণে বিজয়গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’ একটি জনপ্রিয় কাব্য।

   কাব্য রচনাকালঃ   
        বিজয় গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’ কাব্যের রচনাকালজ্ঞাপক শ্লোকটি হলঃ
‘‘ঋতু শশী বেদ শশী পরিমিত শক ।
সুলতান হোসেন শাহ নৃপতি তিলক ।”
---- এই শ্লোকটি বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়ঃ ঋতু = ৬, শশী = ১, বেদ = ৪, শশী= ১, শকে = শকাব্দ ।
‘অঙ্কস্য বামা গতি’ অনুসারে ১৪১৬ শকে । অর্থাৎ (১৪১৬+৭৮) = ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে এই কাব্য রচিত হয় ।

   কাব্য প্রকাশকালঃ    
        বিজয় গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’ ১৩০৩ বঙ্গাব্দে প্যারিমোহন দাশগুপ্তের উদ্যোগে বরিশাল থেকে প্রকাশিত হয় ।

   চরিত্র পরিচয়ঃ   
(১) চাঁদ সদাগর --- চন্দ্রধর ।
(২) লখীন্দর --- অনিরুদ্ধ ।
(৩) বেহুলা --- নর্তকী ঊষা ( অনিরুদ্ধের স্ত্রী) ।

    বিজয় গুপ্তের মনসামঙ্গল কাব্যের বৈশিষ্ট্যঃ    
(a) বিজয় গুপ্তের মনসামঙ্গল তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান।
(b) কাহিনিচয়ন, চরিত্রচিত্রণ ও সমাজজীবনের প্রতিবিম্বনে বিজয়গুপ্ত দেবমাহাত্ম্যকে অবাস্তব কল্পনা রাজ্যের বিষয়বস্তু করে তোলেননি।
(c) তীক্ষ্ণ সমাজচেতনা ও প্রগাঢ় বাস্তব জীবনবোধ তাঁর কাব্যের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য৷

    বিজয় গুপ্তের কৃতিত্বের মূল্যায়নঃ    
        বিজয় গুপ্তের বড়ো কৃতিত্ব সমাজসচেতন প্রখর বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি। সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক চিত্রকে তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গে উজ্জ্বল বর্ণে চিত্রিত করেছেন। সে যুগের আচার ব্যবহার, রীতিনীতি, পোশাকপরিচ্ছদ, আহার ও রন্ধন প্রণালী প্রভৃতি বিষয়কে তিনি খুবই নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। -

    'মনসা'র চরিত্রাঙ্কনে বিজয় গুপ্তের কৃতিত্বের পরিচয়ঃ    
        প্রচণ্ড হিংসা ও নির্মম ক্রুরতার এক দাবদাহ চরিত্র মনসা। একটি দেবী চরিত্রকে এরূপ নির্জলা অসদগুণের অধিকারী করে তোলার পিছনে কবি যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণগুলি মনসার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে পরিস্ফুট করেছেন। নিজ জীবনের অপরিসীম নৈরাশ্যবোধ থেকেই মনসা বিবেক বুদ্ধিহীন নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছেন। বাস্তব চরিত্র হিসেবে চরিত্রটি পাঠকের সহানুভূতি আকর্ষণ করে।

এক নজরে বিজয় গুপ্ত


1. প্রাক চৈতন্য যুগের মনসামঙ্গলের কবি বিজয়গুপ্ত ।
2. বিজয় গুপ্ত পঞ্চদশ শতাব্দীর কবি ।
3. বিজয় গুপ্ত বাংলাদেশের বরিশাল জেলার গৈলা বা ফুল্লশ্রী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন ।
4. ফুল্লশ্রী / ফুলেশ্বর গ্রামের বর্তমান নাম গৈলা ।
5. বিজয় গুপ্তের ধর্মমত ছিল বৈষ্ণব ।
6. বিজয় গুপ্তের পিতার নাম সনাতন গুপ্ত । মাতার নাম রু´িনী দেবী ।
7. ‘সনাতন তনয় রুক্ষ্মিনী গর্ভজাত’ - বিজয় গুপ্ত নিজের সম্পর্কে একথা বলেছেন ।
8. বিজয় গুপ্তের ছদ্মনাম রঘুনাথ / রাধানাথ ।
9. বিজয় গুপ্তের কাব্যের নাম ‘পদ্মাপুরাণ’ ।
10. বিজয় গুপ্তের কাব্য ১৩০৩ বঙ্গাব্দে প্যারিমোহন দাশগুপ্তের উদ্যোগে বরিশাল থেকে প্রকাশিত হয় ।
11. বিজয় গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’ ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে রচিত হয় ।
12. গৌড়ের শাসক হুসেন শাহের আমলে বিজয় গুপ্ত কাব্য রচনা শুরু করেন ।
13. বিজয় গুপ্তের কাব্য পূর্ববঙ্গে সর্বাধিক প্রচারিত ।
14. বিজয় গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’ কাব্যে সুলতান হোসেন শাহের উল্লেখ রয়েছে ।
15. বিজয় গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’ পয়ার ও লাচার ছন্দে রচিত ।
16. ‘হরিদত্তের গীত যত পাইল লোপ’ - বলেছেন বিজয় গুপ্ত ।
17. ‘মূর্খে রচিল গীত না জানে মাহাত্ম” - বিজয় গুপ্ত কানাহরি দত্ত সম্পর্কে একথা বলেছেন ।
18. ‘জনম দুঃখিনী আমি দুঃখে গেল কাল / যেই ডাল ধরি আমি ভাঙে সেই ডাল” - বিজয় গুপ্তের কাব্যে মনসা এই উক্তি করেন ।

No comments