রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক কাব্যে নজরুল রবিতাপে হারিয়ে না গিয়ে প্রথম রবীন্দ্রনাথের মায়াজাল ভেঙে বিদ্রোহের নিশান উড়িয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিন...
রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক কাব্যে নজরুল রবিতাপে হারিয়ে না গিয়ে প্রথম রবীন্দ্রনাথের মায়াজাল ভেঙে বিদ্রোহের নিশান উড়িয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন—“গাহি সাম্যের গান—/ যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান / যেখানে মিশেছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম-ক্রীশ্চান/গাহি সাম্যের গান”। সাম্যের গান রচয়িতা নজরুল, সৃষ্টি সুখের উল্লাসের কবি নজরুল, ধূমকেতুর কবি নজরুল, সুরের কবি নজরুল, বিদ্রোহী কবি নজরুল আমাদের প্রিয় কবি। কেননা, নজরুলের ব্যক্তিত্বকে, মানুষ নজরুলকে, কবি নজরুলকে, সঙ্গীতজ্ঞ নজরুলকে হিন্দু-মুসলমানের মিলন মৈত্রীর কবি নজরুলকে বাঙালি কোনদিন ভুলবে না।
পরিচিতিঃ
১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাবা ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাযারের খাদেম। নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল "দুখু মিয়া" । বাল্য বয়সেই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটি লেটো (বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমাণ নাট্যদল) দলে যোগ দেন।অল্প বয়সেই তার নাট্যদলের জন্য বেশকিছু লোকসঙ্গীত রচনা করেন।১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেনাবাহিনী থেকে ফিরে এস সাহিত্য সাধনায় মনোনিবেশ করেন । ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
- ‘কহ্লন মিশ্র’,
- ‘ব্যাঙাচি’,
- ‘গাজী আব্বাস বিটকেল’ ।
সাহিত্য কর্ম :
কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী এবং অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। কবি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। নিম্নে তাঁর রচিত সাহিত্য কর্মের একটি তালিকা দেয়া হলঃ
প্রথম রচনা :
(a) প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ / গল্পগ্রন্থ ➡ ব্যথার দান’ (প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১৯২২)।
(b) প্রথম প্রকাশিত রচনা ➡ বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী’ (প্রকাশ: জ্যৈষ্ঠ ১৩২৬; সওগাত)।
(c) প্রথম প্রকাশিত কবিতা ➡ মুক্তি’ (প্রকাশ: শ্রাবণ ১৩২৬ / ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ )- বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।
(d) প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ➡ অগ্নি-বীণা (সেপ্টেম্বর, ১৯২২)।
(e) প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ➡ বাঁধনহারা ‘ (১৯২৭)।
(f) প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধ ➡ তুর্কমহিলার ঘোমটা খোলা‘ (প্রকাশ: কার্তিক ১৩২৬)।
(g) প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ ➡ ‘যুগবাণী’ (অক্টোবর ১৯২২)।
(h) প্রথম প্রকাশিত নাটক ➡‘ঝিলিমিলি’ (১৩৩৪, নওরোজ)।
(i) প্রথম প্রকাশিত নাট্য গ্রন্থ ➡‘ঝিলিমিলি’ (১৩৩৭)। এই গ্রন্থে মোট তিনটি নাটক আছে।
(j) প্রথম বাজেয়াপ্ত গ্রন্থ ➡‘বিষের বাঁশী’ (প্রকাশ: আগষ্ট ১৯২৪/ বাজেয়াপ্ত: ২৪ অক্টোবর ১৯২৪)।
নজরুল ইসলাম সম্পাদিত পত্র – পত্রিকাঃ
(i) নবযুগ – ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই জুলাই ।(ii) ধুমকেতু – ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১১ ই আগস্ট ।
(iii) লাঙল – ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে ডিসেম্বর ।
কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কাব্যগ্রন্থ :
⇛ ‘অগ্নিবীণা’ ⟶ ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘দোলন চাঁপা’ ⟶ ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘বিষের বাঁশ ‘⟶ ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ভাঙার গান’ ⟶ ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ছায়ানট’ ⟶ ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘চিত্তনামা’ ⟶ ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘সাম্যবাদী’ ⟶ ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘পূবের হাওয়া’ ⟶ ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘সর্বহারা’ ⟶ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ফণিমনসা’ ⟶ ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘সিন্ধু হিন্দোল’⟶ ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘সঞ্চিতা’ ⟶ ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ঝিঙে ফুল’⟶ ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘জিঞ্জীর’ ⟶ ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘চক্রবাক’ ⟶ ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘সন্ধ্যা’ ⟶ ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘প্রলয় শিখা’ ⟶ ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘নির্ঝর‘ ⟶ ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘নতুন চাঁদ’ ⟶ ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘মরুভাস্কর’ ⟶ ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘সঞ্চয়ন’ ⟶ ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘মধুবালা’ ⟶ ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ঝড়’ ⟶ ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ধুমকেতু’ ⟶ ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘রাঙাজবা ‘ ⟶ ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ঝিলিমিলি’ ➡ (নাটক) ➡ ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘আলেয়া’ ➡ (গীতিনাট্য) ➡ ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘পুতুলের বিয়ে’ ➡ (কিশোর নাটক)➡ ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘মধুমালা’ ➡ (গীতিনাট্য) ➡ ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ঝড়’➡ (কিশোর কাব্য-নাটক) ➡ ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘পিলে পটকা পুতুলের বিয়ে’ ➡ (কিশোর কাব্য-নাটক) ➡ ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দ ।
উপন্যাস :
⇛ ‘বাঁধন হারা’ ➡ ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘মৃত্যুক্ষুধা’ ➡ ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘কুহেলিকা’➡ ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘জীবনের জয়যাত্রা’➡ ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ ।
ছোটগল্প:
⇛ ‘ব্যাথার দান’ ➡ ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘রিক্তের বেদন’ ➡ ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘শিউলি মালা’ ➡ ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ ।
প্রবন্ধ - নিবন্ধ:
⇛ ‘যুগবানী’ ➡ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ঝিঙ্গে ফুল’ ➡ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘দুর্দিনের যাত্রী’ ➡ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘রুদ্র মঙ্গল’ ➡ ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ধুমকেতু’ ➡ ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ ।
সঙ্গীত গ্রন্থাবলী:
⇛ ‘বুলবুল’ ➡ (১ম খন্ড-১৯২৮, ২য় খন্ড-১৯৫২)
⇛ ‘চোখের চাতক’ ➡ (১৯২৯)
⇛ ‘চন্দ্রবিন্দু’ ➡ (১৯৪৬)
⇛ ‘নজরুল গীতিকা’ ➡ (১৯৩০)
⇛ ‘নজরুল স্বরলিপি’ ➡ (১৯৩১)
⇛ ‘সুরসাকী’ ➡ (১৯৩১)
⇛ ‘জুলফিকার’ ➡ (১৯৩২)
⇛ ‘বনগীতি’ ➡ (১৯৩২)
⇛ ‘গুলবাগিচা’➡ (১৯৩৩)
⇛ ‘গীতিশতদল’ ➡ (১৯৩৪)
⇛ ‘সুরলিপি’ ➡ (১৯৩৪)
⇛ ‘সুর-মুকুর’ ➡ (১৯৩৪)
⇛ ‘গানের মালা’ ➡ (১৯৩৪)
ছোটগল্প:
⇛ ‘ব্যাথার দান’ ➡ ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘রিক্তের বেদন’ ➡ ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘শিউলি মালা’ ➡ ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ ।
প্রবন্ধ - নিবন্ধ:
⇛ ‘যুগবানী’ ➡ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ঝিঙ্গে ফুল’ ➡ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘দুর্দিনের যাত্রী’ ➡ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘রুদ্র মঙ্গল’ ➡ ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ ।
⇛ ‘ধুমকেতু’ ➡ ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ ।
সঙ্গীত গ্রন্থাবলী:
⇛ ‘বুলবুল’ ➡ (১ম খন্ড-১৯২৮, ২য় খন্ড-১৯৫২)
⇛ ‘চোখের চাতক’ ➡ (১৯২৯)
⇛ ‘চন্দ্রবিন্দু’ ➡ (১৯৪৬)
⇛ ‘নজরুল গীতিকা’ ➡ (১৯৩০)
⇛ ‘নজরুল স্বরলিপি’ ➡ (১৯৩১)
⇛ ‘সুরসাকী’ ➡ (১৯৩১)
⇛ ‘জুলফিকার’ ➡ (১৯৩২)
⇛ ‘বনগীতি’ ➡ (১৯৩২)
⇛ ‘গুলবাগিচা’➡ (১৯৩৩)
⇛ ‘গীতিশতদল’ ➡ (১৯৩৪)
⇛ ‘সুরলিপি’ ➡ (১৯৩৪)
⇛ ‘সুর-মুকুর’ ➡ (১৯৩৪)
⇛ ‘গানের মালা’ ➡ (১৯৩৪)
⇛ ‘বিষের বাঁশী’
⇛ ‘ভাঙার গান’
⇛ ‘সর্বহারা’
⇛ ‘রুদ্রমঙ্গল’
⇛ ‘দুর্দিনের যাত্রী’
⇛ ‘যুগবাণী’ ।
আলোচনাঃ
⇛ নজরুল সাম্যবাদী ভাবধারার কবি ।
⇛ নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘ভাঙার গান’ এই ৩ টি কাব্যগ্রন্থের মূলে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলন ।
⇛ ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে সেপ্টেম্বর ধুমকেতু পত্রিকায় “অনন্দময়ীর আগমনে” কবিতাটি প্রকাশিত হলে নজরুল ইসলাম রাজরোষে পড়েন এবং গ্রেপ্তার হন ।
⇛ “ধুমকেতু” কাব্যগ্রন্থের জন্যও নজরুল ইসলাম রাজদ্বারে দণ্ডিত হয়েছিলেন ।
⇛ ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে “প্রলয়ঙ্কর” এবং “নমস্কার” রচনা ২ টি ছাপা হওয়ার সময় পুলিশ প্রেসে বই ২ টি নষ্ট করে দেয় ।
⇛ ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে “প্রলয় শিখা” কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলে নজরুল ইসলাম রাজরোষে পড়ে ৬ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন ।
⇛ নজরুল ইসলামের “ছায়ানট”, “দোলন চাঁপা”, “সিন্ধু হিন্দোল”, “চক্রবাক” কাব্যগ্রন্থগুলির মূল সুর প্রেম ও নিসর্গ চেতনা ।
⇛ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি তাঁর বিখ্যাত “বিদ্রোহী” কবিতাটি লেখেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ই জানুয়ারি বিজলী পত্রিকায় কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ।
⇛ নজরুল ইসলামের ২ টি নাট্য কাহিনী - “সাপুড়ে” এবং “বিদ্যাপতি” ছায়াচিত্রে রূপায়িত হয় ।
⇛ বুদ্ধদেব বসু তাঁর “রবীন্দ্রনাথ ও উত্তরসাধক” গ্রন্থে বলেছেন – “নজরুল হলেন রবীন্দ্রনাথের পর ‘প্রথম মৌলিক কবি”।
⇛ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “বসন্ত” নাটকটি নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেন ।
⇛ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অনুরোধে নজরুল ইসলাম তাঁর “কাণ্ডারী হুঁশিয়ারি” কবিতাটি রচনা করেন।
⇛ নজরুল ‘চিত্তনামা’ কাব্যটি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে নিবেদিত করেন ।
নজরুলকে 'মানুষের কবি বলার কারণ :
নজরুল ইসলাম শ্রেণি-প্রাধান্য স্বীকার করেননি। তিনি সকল মানুষের সমান অধিকার ও সম্ভাবনার দিকে জোর দিয়েছেন এবং মানুষের চিরন্তন আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, যৌবন-প্রেম, বীর-ধর্ম প্রভৃতি নিয়ে কবিতা লিখেছেন। এ জন্য তাঁকে ‘মানুষের কবি' বলে আখ্যাত করা হয়।
নজরুলের কবিতার বৈশিষ্ট্য:
(ক) নজরুলের কবিতায় সুজন-প্রলয়ের সংগঠিত পূর্ণদৃষ্টি প্রকাশিত,
(খ) সাম্যবাদী সুর,
(গ) সমাজতান্ত্রিক চেতনা,
(ঘ) সত্যের প্রতি, ন্যায়ের প্রতি অকুণ্ঠ দরদ ও পক্ষপাতিত্ব,
(ঙ) স্বাভাবিক ও দৃঢ় বলিষ্ঠতা,
(চ) জাতীয়তা ও মানবতা।
বাংলা কাব্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের তুলনামূলক আলোচনা :
রবীন্দ্রনাথ বাংলার সাহিত্যাকাশে তাঁর কাব্যকলার শুভ্র স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নাজাল বিস্তার করে যে সৌন্দর্যের মদির মায়া ছড়িয়ে রেখেছিলেন, সেই একই আকাশে তাঁরই পাশে নজরুল তাঁর ধূমকেতুর জ্বালা আর পুচ্ছতাড়নার সন্ত্রাস নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলেন। বাংলা সাহিত্য তাঁর আবির্ভাবে আত্ম-সম্বিৎ ফিরে পেল। 'নব-নবীনে'র চেতনায় উদ্বুদ্ধ হল। রবীন্দ্রনাথ জাতির মূঢ়-মুক-ম্লান মুখে ভাষা আর ভগ্ন-শ্রাস্ত-শুষ্ক বুকে আশা ধ্বনিত করে তোলার যে আহ্বান দিয়েছিলেন, সেই আহ্বানকে রূপায়িত করতেই যেন নজরুলের আবির্ভাব।
কবি নজরুলের প্রতিভা:
রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কাব্য সাহিত্যে নজরুল এক উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম। একটা যুগের স্রষ্টা হিসেবেই তিনি বাংলা সাহিত্যের গতানুগতিক ধারার এক ব্যতিক্রম হয়ে বিরাজমান। 'রবীন্দ্রনাথ মিস্টিক (কাব্যে মিস্টিসিজম্ সোনার পাথরবাটি), সত্যেন্দ্রনাথ ছান্দসিক, নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী।— প্রমথনাথ বিশীর মন্তব্যটি স্মরণীয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভারত তথা বাংলার বিপ্লব বা সন্ত্রাসবাদের টালমাটাল কাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৩০-৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাজী নজরুল রবীন্দ্রনাথকে সামনে রেখেই সমান্তরাল একটা স্বতন্ত্র কাব্যযুগের পত্তন করেছিলেন।

No comments