Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

বিশ শতকের একজন বাঙালি সমাজবিজ্ঞানী, সাহিত্য সমালোচক, লোকসংস্কৃতি সাধক, প্রাবন্ধিক বিনয় ঘোষঃ

ঊনবিংশ শতকের বাংলা ও বাংলার নবজাগরণের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা যে কয়েকজন সাহিত্যিকের রচনায় প্রকাশ পেয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিনয় ঘোষ । তিনি ব...


ঊনবিংশ শতকের বাংলা ও বাংলার নবজাগরণের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা যে কয়েকজন সাহিত্যিকের রচনায় প্রকাশ পেয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিনয় ঘোষ । তিনি বিশ শতকের একজন বাঙালি সমাজবিজ্ঞানী, সাহিত্য সমালোচক, সাহিত্যিক, লোকসংস্কৃতির সাধক ও গবেষক। ইতিহাস ও রাজনীতি সম্পর্কিত পর্যালোচনায় বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী।

পরিচয়ঃ
        ১৯১৭ সালে ১৪ ই জুন কলকাতার ভবানীপুর হাজরা লেনের (বর্তমানের ল্যান্সডাউন প্লেস) নিম্নমধ্যবিত্ত পল্লিতে তাঁর জন্ম। বিনয় ঘোষের আদি বাস্তু তৎকালীন যশোহর জেলার বনগাঁর গোয়াপাড়ায়। তাঁর বাবার নাম বিশ্বেশ্বর ঘোষ, মা সরসীবালা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি মার্কসবাদী বিশ্বাসী ছিলেন। দীর্ঘকাল ধরে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ভারতীয় ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সক্রিয় সদস্য কর্মী ছিলেন। ৬৬ বৎসর বয়সে ২৫ শে জুলাই ১৯৮০ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

ছদ্মনাম ঃ বিনয় ঘোষের ছদ্মনাম ‘কালপেঁচা’ । 

সাহিত্য কর্মঃ
        বিনয় ঘোষের লেখালিখি ও রচনাধারায় স্পষ্ট দুটি পর্ব আছে। একটা সময়ে তিনি গণনাট্য সংঘের গঠনমূলক স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে ‘ল্যাবরেটরি’ নামে একটি নাটক লেখেন এবং তা অভিনীত হয়। পরের দিকে তিনি মার্ক্সীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন প্রবন্ধ রচনা করেন ।
নাটকঃ 
‘ল্যাবরেটরি’: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, পাহাড়প্রমাণ অন্যায়-দুর্নীতি, মৃত্যুস্রোত ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে বিনয় ঘোষ ল্যাবরেটরী নাটকটি লেখেন। নাটকটি ফ্যাসিস্ট বিরোধী চলচ্চিত্র প্রফেসর ম্যামলকের আদর্শ অনুসরণের রচনা করেন।

ছোটগল্প সংকলনঃ
ডাস্টবিন :  ১৯৪৩ এ 'বোধন' নামে বিনয় ঘোষের একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। দীর্ঘকাল পরে গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ ডাস্টবিন (১৯৮০) নামে প্রকাশিত হয়। গল্পগুলি ১৯৩০ এর দশকের শেষ দিক থেকে ১৯৪০ এর প্রথমদিকে রচনা। গ্রন্থটি বিনয় ঘোষ 'প্রিয় ডাশহুড কুকুর ভিটে'র' উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত।


প্রবন্ধাবলীঃ
(a) শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ’ (১৯৪০)
(b) ‘নতুন সাহিত্য সমালোচনা’ (১৯৪০
(c) ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি’ (১৯৪১)
(d) ‘ফ্যাসিজম ও জনযুদ্ধ’ (১৯৪২)
(e) ‘সংস্কৃতির দুর্দিন’ (১৯৪৪-৪৫)
(f) ‘বাংলার নবজাগৃতি’ (১৯৪৮)
(g) ‘বরণীয় বাঙালি’ (১৯৫০)
(h) ‘কাল পেঁচার নকশা’(১৯৫১)
(i) ‘কালপেঁচার দু'কলম’(১৯৫২)
(j) ‘কলকাতার কালচার’ (১৯৫৩)
(k) ‘জনসভার সাহিত্য’ (১৯৫৫)
(l) ‘কাল পেঁচার বৈঠকে’ (১৯৫৭)
(m) ‘পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’ (১৯৫৭)
(n) ‘বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ’ (১ম - ১৯৫৭,  ২য় ও ৩য় খন্ড - ১৯৫৯)
(o) ‘টাউন কলিকাতার কড়চা’ (১৯৬১)
(p) ‘বিদ্রোহী ডিরোজিও’ (১৯৬১)
(q ‘বাংলার বিদ্বৎসমাজ’ (১৯৭৩)
(r) ‘মেট্রোপলিটন মন মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ’ (১৯৭৭)
(s) ‘অটোমেটিক জীবন ও সমাজ’ (১৯৭৮)
(t) ‘মেহনত ও প্রতিভা’(১৯৭৮)
(u) ‘নববাবু চরিত’ (১৯৭৯)
(v) ‘বাংলার লোকসংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব’ (১৯৭৯) ।

আলোচনাঃ
(i) শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ (১৯৪০):
           এই গ্রন্থে মোট ১২ টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। প্রবন্ধ গুলির কয়েকটি হল: 'ডায়লেকটিক', 'শিল্পের স্বরূপ বিশ্লেষণ', 'সত্য ও বাস্তব', 'কাব্য', 'কাব্যের ক্রমবিকাশ', 'উপন্যাস', 'উপন্যাসের ঐতিহাসিক ধারা', 'আধুনিক সোভিয়েট সাহিত্য', এছাড়া ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের সংস্করণে 'কেন লিখি? কার জন্য লিখি? নামে একটি রচনা এই গ্রন্থের শেষভাগে স্থান লাভ করেছে।

(ii) নূতন সাহিত্য ও সমালোচনা(১৯৪০):
        'নূতন সাহিত্য ও সমালোচনা' গ্রন্থে লেখকের মার্কসবাদী চিন্তা-ধারা প্রকাশিত হয়েছে ধারালো ভাবে। গ্রন্থে মোট আটটি প্রবন্ধ আছে। সেগুলি হল-‘নূতন সাহিত্য’, ‘চীনের সাম্প্রতিক সাহিত্য ও সাহিত্যিক, সাহিত্য ও প্রোগাগান্ডা, সমরোত্তর ইংরেজি কাব্য,   বাংলা সমালোচনা, নূতন সমালোচনা, সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা এবং ভারতীয়় সংস্কৃতির বেদী।


(iii) পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি (১৯৫৭):
        পশ্চিমবঙ্গেের বিভিন্ন অঞ্চলের নানান লৌকিক পরব-পার্বণ আচার-অনুষ্ঠান প্রচার-সংস্কার দেবদেবী-দেবালয় শিল্পকলা জনগোষ্ঠী ইত্যাদি সংস্কৃতির বিষয়গুলি লেখক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন। লেখক প্রায়় দু'শটি গ্রাম প্রত্যক্ষ করে তার মধ্যে নব্বইটি গ্রামের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

(iv) বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ (১৯৫৭-৫৯):
        ১৯৫৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্‌যাপনের অঙ্গরূপে কর্তৃপক্ষ ‘বিদ্যাসাগর বক্তৃতামালা’র ব্যবস্থা করে। সেই প্রথম বক্তৃতামালার বক্তা হিসাবে বিনয় ঘোষ আহূত হন। মোট ছ’টি লিখিত ভাষণ দেন তিনি। যেগুলি নিয়ে ১৯৫৭ সালে ‘বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ’(২টি খন্ড) প্রকাশিত হয় ।

️(v) কালপেঁচার নকশা (১৯৫১):
        দৈনন্দিন 'সংলাপীয় ভঙ্গি' বহার করেছেন। লেখক 'কালপেঁচা' ছদ্মনামে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে 'কালপেঁচার দু'কলম'এবং ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে কাল পেঁচার বৈঠকে প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেন। এই তিন গ্রন্থ একত্রে 'পাঠভবন' থেকে 'কালপেঁচার রচনাসংগ্রহ' প্রকাশিত হয়।

No comments