Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

সৈয়দ মুজতবা আলি :

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে দ্বিখণ্ডিত হলেও হারিয়ে যায়নি অখন্ড ভারতবর্ষের ঐতিহ্যশালী সংস্কৃতি। বাংলার ধর্মগত সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পার্থক্য থাক...



১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে দ্বিখণ্ডিত হলেও হারিয়ে যায়নি অখন্ড ভারতবর্ষের ঐতিহ্যশালী সংস্কৃতি। বাংলার ধর্মগত সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পার্থক্য থাকলেও পার্থক্য নেই দুই বাংলার সংস্কৃতিতে, সাহিত্যচর্চায় ও মননে। দুই বাংলার স্বতন্ত্র নিজস্ব এই সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চা এই দুই অঞ্চলের রুচিশীল সংস্কৃতিবান মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকে। যুগে যুগে বাংলার ভূমিতে এমন মানুষের অভাব কোনদিন ঘটে নি। এদের মধ্যেই কিছু উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বাংলার সংস্কৃতি চর্চার আকাশ আলোকিত করেছেন যুগে যুগে। তেমনি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কগুলির মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সৈয়দ মুজতবা আলী।

   পরিচয় :    
        সৈয়দ মুজতবা আলী জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে আসামের অন্তর্ভুক্ত সিলেটের করিমগঞ্জে। পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তাঁর পৈতৃক ভিটা মৌলভীবাজার, সিলেট। এখানে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পিতার বদলির চাকরি কারণে মুজতবা আলীর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।  তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। এখানে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, উর্দূ, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয়সহ পনেরোটি ভাষাশিক্ষা লাভ করেন । ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে এখান থেকে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৭ নং কক্ষে সৈয়দ মুজতবা আলী মৃত্যুবরণ করেন।

    বিখ্যাত উক্তি :     
       ১৯৫০-৬০ দশকে মুজতবা আলী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি হলো:
“ বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। ”
    ছদ্মনাম :    
  • ‘প্রিয়দর্শী’, 
  • ‘ওমর খৈয়াম’, 
  • ‘টেকচাঁদ’, 
  • ‘সত্যপীর’
  • ‘রায়পিখোরা’
  • ‘ইন্দ্রানী সরকার’ ।
      রচনাসমূহ ঃ     
     প্রথম রচনা :      
(a) সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত প্রথম উপন্যাস – অবিশ্বাস্য (১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়) ।
(b) সৈয়দ মুজতবা আলীর যে গ্রন্থটি রচনার মধ্যদিয়ে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে – দেশে বিদেশে (১৯৪৯) গ্রন্থটির মধ্যদিয়ে (বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ভ্রমণ কাহিনী হিসেবে গণ্য) ।

    প্রবন্ধগ্রন্থ :    
  • ‘দেশে বিদেশে’ ( ১৯৪৯)
  • ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ (১৯৫৬)
  • ‘জলে ডাঙায়’ (১৯৫৬)
  • ‘দ্বন্দ্ব মধুর’  (১৯৫৮)
  • ‘চতুরঙ্গ’ (১৯৬০)
  • ‘ভবঘুরে ও অন্যান্য’ (১৯৬২)
  • ‘বহুবিচিত্রা’ (১৯৬২)
  • ‘বড়বাবু’ (১৯৬৫)
  • ‘হাসামধুর’ (১৯৬৬)
  • ‘পছন্দসই’ (১৯৬৭)
  • ‘রাজা উলীর’ (১৯৬৯)
  • ‘হিটলার’ (১৯৭০)
  • ‘কড় না অশ্রুতলে’ (১৯৭১ - স্মৃতিচারণা মূলক রচনা)
  • ‘মুসাফির’ (১৯৭১)
  • ‘গুরুদেব ও শান্তিনিকেতন’ (১৯৮১)

    উপন্যাস :   
  • ‘অবিশ্বাস্য’ (১৯৫৪)
  • ‘শবনম’ (১৯৬০)
  • ‘শহর-ইয়ার’ (১৯৬৯)
  • ‘তুলনাহীনা’ (১৯৭৪)

     ভ্রমণকাহিনী :     
  • ‘দেশে বিদেশে’ (১৯৪৯) - কাবুল শহরের কাহিনী নিয়ে রচিত ।
  • ‘জলে ডাঙ্গায়’ (১৯৬০)

    ছোটগল্প :    
  • ‘চাচা কাহিনী’ (১৯৫২)
  • ‘টুনি মেম’ (১৯৬৪)

    রম্যরচনা :    
  • ‘পঞ্চতন্ত্র’ (১৯৫২)
  • ‘ময়ূরকন্ঠী’ (১৯৫৭)
  • ‘ধূপছায়া’ (১৯৫৭)
  • ‘দু'হারা’ (১৯৬৫)
    পুরস্কার ও সম্মাননা :   
  •  ১৯৪৯ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  নরসিংহ দাস পুরস্কার লাভ করেন। 
  • ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের পক্ষ থেকে  আনন্দ পুরস্কার পান। 
  • সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের কারণে বাংলাদেশ সরকার মুজতবা আলীকে ২০০৫ সালে  মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।

     গদ্যশৈলীঃ     
        মুজতবা আলীর গদ্যশৈলীর বৈশিষ্ট্যগুলো হল—
১। মুজতবা আলীর গদ্য বিষয় অনুযায়ী কখনও গম্ভীর আবার কখনও তরল।
২। তাঁর গদ্যের স্বভাব হল বৈঠকী গদ্যের স্বভাব।
৩। অসমাপিকা ক্রিয়াপদের ব্যবহার বেশি না করে ছোটো ছোটো কাব্যেই তিনি মনের ভাবপ্রকাশ করতে ভালোবাসতেন।
৪। পরিহাস প্রবণতা তাঁর গদ্য ভাষার অপর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
৫। খুব পরিচিত শব্দকেই তিনি তাঁর গদ্যরচনায় প্রয়োগ করেছেন।

No comments