Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

প্রমথ চৌধুরী - গদ্য ও প্রবন্ধ সাহিত্যঃ

বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের পর প্রবন্ধ সাহিত্যকে নতুন করে মেজাজ ও ভঙ্গির প্রাধান্য দিয়ে গড়ে তোলার প্রয়াস যিনি একমাত্র করেছিলেন তিনি হলেন...

বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের পর প্রবন্ধ সাহিত্যকে নতুন করে মেজাজ ও ভঙ্গির প্রাধান্য দিয়ে গড়ে তোলার প্রয়াস যিনি একমাত্র করেছিলেন তিনি হলেন ‘সবুজপত্রে'র সম্পাদক প্রমথ চৌধুরী (১8৬৮ -১৯৪৬)। তিনি প্রবন্ধের মধ্যে মজলিশি আলাপের সুর, খেয়াল-খেলার লীলায়িত ছন্দ, ভারমুক্ত স্বচ্ছন্দ মননের ‘বিসর্পিত' সঞ্চরণের প্রবর্তন করেন।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রমথ চৌধুরী ‘বীরবল’ ছদ্মনামে প্রবন্ধ ও গদ্য সাহিত্যে আবির্ভূত হন । বাংলা সাহিত্যে তাঁর আবির্ভাব কবি রূপে । তাঁর কাব্যগ্রন্থ হল -------
(i) ‘সনেট পঞ্চশৎ’ (১৯১৩) --- ‘সবুজপত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । এই কাব্যের দুটি সনেট হল -- ‘উপদেশ ও বিশ্বরূপ’ ।
(ii) ‘পদচারণ’ (১৯১৯) ।


প্রবন্ধগ্রন্থসমূহঃ
(১) ‘তেল নুন লকড়ী’ (১৯০৬)
(২) ‘বীরবলের হালখাতা’ (১৯১৭)
(৩) ‘নানাকথা’ (১৯১৯)
(৪) ‘আমাদের শিক্ষা’ (১৯২০)
(৫) ‘দু ইয়ার কি’ (১৯২১)
(৬) ‘বীরবলের টিপ্পনি’ (১৯২১)
(৭) ‘রায়তের কথা’ (১৯২৬)
(৮) ‘নানাচর্চা’ (১৯৩২)
(৯)‘ঘরে বাইরে’ (১৯৩৬)
(১০) ‘প্রাচীন হিন্দুস্থান’ (১৯৪০)
(১১) ‘বঙ্গ সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয়’ (১৯৪৪)
(১২) ‘আত্মকথা’ (১৯৪৬)
(১৩) ‘প্রচীন বঙ্গ সাহিত্যে হিন্দু মুসলমান’ (১৯৫৩)

এই প্রবন্ধগুলির বাইরে তিনি গদ্য শিল্পি হিসাবে অনেকগুলি গল্প রচনা করেছিলেন । নিন্মোক্ত গল্পগ্রন্থে সেগুলি সংকলিত হয়েছে --
গল্পগ্রন্থঃ
(১) ‘চার ইয়ারী কথা’ (১৯১৬)
(২) ‘আহুতি’ (১৯১৯)
(৩) ‘নীললোহিতের আদি প্রেম’ (১৯৩৪)
(৪) ‘ঘোষালের ত্রিকথা’ (১৯৩৭)
(৫) ‘অনুকথা সপ্তক’ (১৯৩৯)
(প্রমথ চৌধুরীর প্রথম গল্প ‘ফুলদানী’ (১৮৯১) - ‘সাহিত্য পত্র’ এ প্রকাশিত হয় । তাঁর দ্বিতীয় গল্প ‘আহুতি’ ।)

** ভাষা সমস্যা বিষয়ক প্রবন্ধঃ   ‘কথার কথা’, ‘বাংলা ব্যাকরণ’, ‘বঙ্গভাষা বনাম বাবু বাংলা ওরফে সাধুভাষা’, 
                                                    ‘আমাদের ভাষা সংকট’, ‘সাধুভাষা বনাম চলিত ভাষা’।
** সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধঃ  ‘সাহিত্য খেলা’, ‘সাহিত্য চাবুক’, ‘কাব্যে অশ্লীলতা’, ‘বস্তুতন্ত্রতা বস্তু কি  ‘, ‘খেয়াল পাতা’ ।
** শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধঃ   ‘আমাদের শিক্ষা’, ‘বাংলার ভবিষ্যত’, ‘বইপড়া’, ‘নব বিদ্যালয়’, ‘শিক্ষার নব আদর্শ’, 
                                         ‘আমাদের শিক্ষা ও বর্তমান জীবন সমস্যা’ ।
** গভীর আবেগমূলক প্রবন্ধঃ   ‘বর্ষা’, ‘ফাল্গুণ’, ‘বর্ষার দিনে’ ।
** আত্মজীবনী মূলক প্রবন্ধঃ ‘আত্মকথা’ (১৯৪৬) ।
** রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন প্রবন্ধঃ ‘তেল নুন লকড়ী’, ‘দু ইয়ার কি’, ‘রায়তের কথা’, ‘ঘরে বাইরে’ ।

প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর মৌলিকতাঃ
        বিষয়ের অন্তরের বিতর্কের ভঙ্গীতে প্রবেশ করে তার প্রাণ কেন্দ্রটিকে আবিস্কার করতে তাঁর জুড়ি নেই । অধ্যয়নের প্রাচুর্য্য এবং জ্ঞানের গভীরতা তাঁর কোনো রচনাকেই ভারাক্রান্ত করেননি, ধারালো করে তুলেছে ।

বাংলা গদ্যরীতিতে অবদান ঃ
        ‘সবুজপত্র’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে প্রমথ চৌধুরি বাংলা গদ্যে নব্যরীতির প্রবর্তন করলেন। চলিতভাষায় যে গুরু-লঘু সর্ববিধ ভাব-ভাবনার প্রকাশ সম্ভব প্রমথ চৌধুরি তা প্রমাণ করবার জন্য অগ্রসর হলেন। ‘সবুজপত্র' প্রমথ চৌধুরির সম্পাদনায় বাংলা গদ্যরীতিতে নতুন ধারা প্রবর্তিত করল । রবীন্দ্রনাথও নব্যরীতির দলভুক্ত হলেন।


ভাষারীতি ঃ
          প্রমথ চৌধুরির নিজের ভাষায় চলিত রীতি ব্যক্তিগত স্টাইলের বাহন। তাতে রয়েছে নাগরিক বৈদগ্ধ্য, মননের তীক্ষ্ণ চমক, রোমান্টিক ভাবালুতার বিরুদ্ধতা, বুদ্ধির অতিচর্চা এবং ক্বচিৎ রঙ্গ, কচিৎ ব্যঙ্গের হাসি। উইট-এপিগ্রামের মুহুর্মুহু ব্যবহারে তাঁর ভাষা সদা উচ্চকিত।

সাহিত্যসমালোচক হিসেবে প্রমথ চৌধুরির কৃতিত্বঃ
         সাহিত্যসমালোচক হিসেবে প্রমথ চৌধুরির খ্যাতি সর্বজনবিদিত। তাঁকে এককথায় ‘রূপবাদী’ আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। ভাবের প্রকাশ নয়, ভাবের রূপনির্মিতিই সাহিত্যিকের কর্তব্য। অনেকখানি ভাব মরে একটুখানি রূপে ধরা দেবে। সাহিত্যিকের প্রখর বস্তুজ্ঞানের ওপরই এই রূপনির্মাণ নির্ভরশীল। তার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে অতন্দ্র নিষ্ঠা ও সাধনা—এই-ই হল প্রমথ চৌধুরির অভিমত। প্রমথ চৌধুরি বাংলা প্রবন্ধ-সাহিত্যের নবধারা সৃষ্টির গৌরব দাবি করতে পারেন। 

প্রাবন্ধিক হিসেবে প্রমথ চৌধুরির মূল্যায়নঃ
         বাংলা সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরি একজন প্রাজ্ঞ প্রবন্ধকার। আঙ্গিক সচেতন শিল্পসৃষ্টির ঔজ্জ্বলো, জ্ঞানবিজ্ঞানে, ব্যাপক চিন্তাশীলতায়, সূক্ষ্ম পরিহাসমধুর, বিচার বিতর্কে ও অনমনীয় প্রখর ব্যক্তিত্বের নিবিড় স্পর্শে তাঁর প্রবন্ধসমূহ আধুনিক বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের গৌরবময় ধারা ও গতি অব্যাহত রেখেছে।

No comments