Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশঃ

বিশ শতকের জটিল মনের আশ্চর্য প্রতীক জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় যাঁরা রবীন্দ্রনাথের পরও নতুন কথা নতুন ভাবে বলা যায়—একথা ভেবেছিলে...


বিশ শতকের জটিল মনের আশ্চর্য প্রতীক জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় যাঁরা রবীন্দ্রনাথের পরও নতুন কথা নতুন ভাবে বলা যায়—একথা ভেবেছিলেন ও সেকথা আমাদের শোনাতে চেয়েছিলেন, জীবনানন্দ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। রবীন্দ্রযুগে বসে জীবনানন্দ একটি নিজস্ব জগৎ সৃষ্টি করতে চেয়েছেন, পেরেছেনও। সে জগৎ ঈশ্বর জগতের অনুকরণ নয়, মায়াবী জগতের ব্যাখ্যা নয়–অনুভূতির আলোছায়ায় তৈরি চেতনার জগত। এখানেই তাঁর অনন্যতা। এজন্য তাঁকে যথার্থ একজন নতুন কবির মতোই যেমন ভাষা ও ছন্দ নিয়ে পরীক্ষায় বসতে হয়েছে তেমনই চিত্র রচনায় ‘শ্রাবস্তীর কারুকার্য’ থেকে ‘দারুচিনির দ্বীপ’ পর্যন্ত ঘুরে ফিরতে হয়েছে।

পরিচিতিঃ
        জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনানন্দের মাতা কুসুমকুমারী দাশ, তিনিও কবিতা লিখতেন। জীবনানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বি এম কলেজ থেকে আই এ এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বি.এ ও ইংরেজিতে এম.এ পাস করেন। আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পরীক্ষা দেননি।জীবনানন্দ কলকাতা সিটি কলেজে ১৯২২ সালে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।

গ্রন্থতালিকাঃ
প্রথম রচনাঃ
⇛ জীবনানন্দের প্রথম কবিতা ‘বর্ষ আবাহন’ -- ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।
⇛  জীবনানন্দ দাশের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ -ঝরা পালক’ ।
⇛ জীবনানন্দের প্রথম উপন্যাস -- ‘পূর্ণিমা’ । 
⇛ জীবনানন্দ দাশের প্রথম প্রবন্ধ গ্রন্থ - ‘কবিতার কথা’।

কাব্যগ্রন্থঃ
(a)  `ঝরা পালক' (১৯২৭)
(b) `ধূসর পাণ্ডুলিপি' (১৯৩৬)
(c)  `বনলতা সেন' (১৯৪২, )
(d) `মহাপৃথিবী' (১৯৪৪)
(e) ` সাতটি তারার তিমির' (১৯৪৮)
(f)  `জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা' (১৯৫৪)
(g)  `রূপসী বাংলা' (১৯৫৭)
(h) `বেলা অবেলা কালবেলা' (১৯৬১)
(i) `সুদর্শনা' (১৯৭৪)
(j) `আলো পৃথিবী' (১৯৮১) 
(k) `মনোবিহঙ্গম'
(l)  `অপ্রকাশিত একান্ন' (১৯৯৯)

প্রবন্ধগ্রন্থঃ
(a) কবিতার কথা (১৯৫৫)
(b) জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধ সমগ্র (১৯৯০)

উপন্যাসঃ
(a) মাল্যবান (১৯৭৩)
(b) সুতীর্থ (১৯৭৭)
(c)  চারজন (২০০৪)

আলোচনাঃ
(a) ‘ঝরাপালক’:
⇛ ‘ঝরা পালক’ কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
⇛  ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ) ভারতের কলকাতা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
⇛ কলকাতার সিটি কলেজে টিউটরের চাকুরী করার সময় জীবনানন্দ দাশ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরাপালক প্রকাশ করেন।
⇛ জীবনানন্দ দাশ স্বীয় কাকা শ্রীঅতুলানন্দের কন্যা শোভনাকে এই কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেছিলেন ।

(b) `ধূসর পাণ্ডুলিপি':
⇛ ‘ধূসর পান্ডুলিপি’ কবি জীবনানন্দ দাশের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। 
⇛ এই কাব্যগ্রন্থটি ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) ভারতে প্রকাশিত হয়। 
⇛ জীবনানন্দ এই বইটি কবি বুদ্ধদেব বসুকে উৎসর্গ করেন।

(c)  `বনলতা সেন':
⇛ বনলতা সেন জনপ্রিয়তম বাংলা কবিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। 
⇛ কবিতাটির রচয়িতা বিংশ শতাব্দীর আধুনিক বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশ। 
⇛ বনলতা সেন প্রধানত রোমান্টিক গীতি কবিতা হিসেবে সমাদৃত।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় । 

(d) `মহাপৃথিবী' :
⇛ মহাপৃথিবী কবি জীবনানন্দ দাশের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ।
⇛ এটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ; 
⇛ প্রকাশক ছিলেন পূর্বাশা লিমিটেডের পক্ষে সত্যপ্রসন্ন ঘোষ।
⇛ মহাপৃথিবী’র সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা আট বছর আগের একদিন।

(e) ` সাতটি তারার তিমির':
⇛ জীবদ্দশায় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রকাশিত সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ হলো সাতটি তারার তিমির ।
⇛ সাতটি তারার তিমির কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ। 
⇛ ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ) কলকাতা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। 
⇛ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এই কাব্যগ্রন্থের বিরুদ্ধে দুবোর্ধ্যতার অভিযোগ ওঠে।

(f)  `জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা' :
⇛ জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ সংকলিত স্বরচিত কবিতার একটি সংকলন।
⇛ কবির মৃত্যুর কয়েকমাস পূর্বে ১৯৫৪ সালের মে মাসে এই গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
⇛  এই গ্রন্থটি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার অর্জন করে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে।

(g)  `রূপসী বাংলা':
⇛ রূপসী বাংলা জীবনানন্দ দাশের সর্বাধিক জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ।
⇛ কবি জীবদ্দশায় এ গ্রন্থটি বা এর অন্তর্ভুক্ত কোন কবিতা প্রকাশ করেন নি। 
⇛ ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে দুঘর্টনায় অকালমৃত্যুর পর এর পাণ্ডুলিপির খাতাটি আবিষ্কৃত হয়।
⇛ কবি এ গ্রন্থটির প্রচ্ছদনাম নির্বাচন করেছিলেন বাংলার ত্রস্ত নীলিমা।
⇛  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এর কবিতাগুলি বাঙালিদের বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।

(h) `বেলা অবেলা কালবেলা' :
⇛ বেলা অবেলা কালবেলা আধুনিক বাংলা কবিতার পথিকৃৎকবি জীবনানন্দ দাশের সপ্তম কাব্যগ্রন্থ।
⇛ কবির মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা অশোকানন্দ দাশ ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ) এ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছিলেন।


আলোচনা:
⇛ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দ দাশের কবিতাকে বলেছেন- চিত্ররুপময় কবিতা।
⇛ তাঁর রচিত কবিতায় কী কী দীপ্যমান- আধুনিক নাগরিক জীবনের হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বিষাদ ও সংশয়ের চিত্র।
⇛ জীবনানন্দ দাশকে  ধূসরতার কবি, তিমির হননের কবি, নির্জনতার কবি, রুপসী বাংলার কবি প্রভৃতি বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয় ।
⇛ জীবনানন্দ দাশের রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ- কবিতার কথা ।
⇛ জীবনানন্দ দাশের রচিত উপন্যাসগুলো হল- মাল্যবান (১৯৭৩), সতীর্থ (১৯৭৪)।
⇛ সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া তাঁর আর একটি উপন্যাসের নাম  কল্যাণী (প্রকাশ : দেশ ১৯৯৯)।
⇛ বিপন্ন মানবতার নীল কণ্ঠ কবি  বলা হয়- জীবনানন্দ দাশকে।
⇛ জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ- ‘ঝরা পালক’ (১৯২৮)
⇛ আধুনিক বাংলা কাব্যের ক্ষেত্রে কল্লোল যুগের কবি- জীবনানন্দ দাশ।
⇛ কবি জীবনানন্দ দাশের ওপর লি ক্লিনটন বি সী নামক  বিদেশী গবেষক গবেষণা করেন।
⇛ জীবনানন্দ দাশের একমাত্র প্রবন্ধ গ্রন্থ - কবিতার কথা, (১৯৫৬ )।
⇛ ‘জীবনানন্দ দাশের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ কাল-১৯৫৪ সালে।
⇛ জীবনানন্দ দাশ রচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা - বনলতা সেন।
⇛ ‘বনলতা সেন’ কবিতাটির বিষয়বস্ত্ত জীবনানন্দ দাশ নিয়েছেনল- এডগার এলান পো’র টু হেলেন’ কবিতা থেকে।


*** রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার ধারায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কবির নাম জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্রনাথের পরে তাঁর কবিতায় যে-নতুন কাব্যভাষার সাক্ষাৎ পাওয়া গেল তা অভিনব এবং আধুনিক। তাঁর সমসাময়িক অনেক কবির মতো তিনি প্রত্যক্ষভাবে রবীন্দ্র-বিরোধে অবতীর্ণ হননি, আধুনিক হবার জন্য প্রকাশ্য কোনো ঘোষণার মধ্যেও যাননি তিনি, অথচ তিনি প্রায় নিঃশব্দে বাংলা কবিতার যুগান্তর ঘটিয়ে দিয়েছেন।

No comments