: প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে নির্বাচিত 20টি 2 নম্বর মানের প্রশ্নোত্তর : : প্রশ্নের বিষয় : চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, চন্ডি...
: প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে নির্বাচিত 20টি 2 নম্বর মানের প্রশ্নোত্তর :
: প্রশ্নের বিষয় :
চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, চন্ডিদাস, বিদ্যাপতি, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, মুকুন্দ চক্রবর্তী, ভারতচন্দ্র রায়, বিজয় গুপ্ত, কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ, ঘনরাম চক্রবর্তী, কৃত্তিবাস ওঝা, মালাধর বসু, কাশীরাম দাস, বৃন্দবন দাস, কৃষ্ণদাস কবিরাজ, সৈয়দ আলাওল, দৈৗলত কাজি, রামপ্রসাদ সেন ও কমলাকান্ত ভট্টাচার্য ।
১) নবচর্যাপদ কি ?
⬐ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের পর ড. শশীভূষণ দাশগুপ্ত ১৯৬৩ সালে নেপাল রাজ দরবারের গ্রন্থাগারে প্রাপ্ত ২০টি পুঁথি থেকে ২৫০টি চর্যাগান আবিস্কার করেন । এই চর্যাগানগুলি থেকে নির্বাচিত ৯৮টি পদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় । এগুলি নবচর্যাপদ নামে পরিচিত ।
২) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের শেষ খণ্ডটির নাম কী? এটি মূলকাব্য থেকে কি প্রক্ষিপ্ত বলে তুমি মনে করো?
⬐ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের শেষ খণ্ডটির নাম 'রাধাবিরহ'।
⬐ রাধাবিরহ’ নামের সঙ্গে খণ্ডনাম যুক্ত না হওয়ায় অনেকে এটিকে মূল কাব্যের প্রক্ষিপ্ত অংশ বলে মনে করে। কিন্তু অংশটি প্রক্ষিপ্ত নয়, কবি রাধার বিরহ বোধের উপর জোর দিতেই এর সঙ্গে খণ্ড নাম যুক্ত করেন নি। তাছাড়া পূর্বের ভাষার সঙ্গে এর মিল আছে। তাই এটি প্রক্ষিপ্ত বিষয় নয়।
৩) পূর্বরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ পদকর্তা কে ? তাঁর জন্মস্থান কোথায় ? তাঁর একটি পূর্বরাগ পর্যায়ের পদের দুটি পঙতি লিখুন ।
⬐ পূর্বরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ পদকর্তা হলেন - চন্ডিদাস ।
⬐ চন্ডিদাস বীরভূম জেলার নানুর গ্রামে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহন করেন ।
⬐ তাঁর একটি বিখ্যাত পূর্বাগ পর্যায়ের পদ হল ---
‘‘রাধার কি হৈল অন্তরে ব্যাথা
বসিয়া বিরলে থাকয়ে একলে
না শুনে কাহারো কথা ।”
৪) বিদ্যাপতি কি বাঙালী কবি ? তিনি কোন ভাষার কবি ? তাঁর লেখা দুটি গ্রন্থের নাম ও প্রকাশকাল লিখুন।
⬐ বিদ্যাপতি বাঙালী কবি নন । তিনি মিথিলার কবি ।
⬐ তিনি মৈথিলি ভাষায় পদ রচনা করলেও ‘ব্রজবুলি’ নামক মিশ্রভাষার মধ্য দিয়ে তাঁর পদ আমাদের কাছে আসে ।
⬐ তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থ হল :
(i) ‘কীর্তিলতা’ (আনুঃ ১৪০২ -০৪),
(ii) ‘পুরুষ পরীক্ষা’ (আনুঃ ১৪১০) ।
৫) জ্ঞানদাস কোন্ শতকের কবি? তাঁর জন্মস্থান কোথায়? তিনি কোন্ সম্মেলনে যোগ দেন ? সেখানে কার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
⬐ জ্ঞানদাস ষোড়শ শতকের কবি ।
⬐ তিনি বর্ধমানের কাঁদড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন ।
⬐ তিনি ‘খেতুরি মহোৎসব’ সম্মেলনে যোগ দেন ।
⬐ খেতুরি মহোৎসবে কবি জ্ঞানদাসের সাথে বলরাম দাস ও গোবিন্দ দাসের সাক্ষাৎ হয় ।
৬) 'সংগীত মাধব' কার লেখা ? তিনি কোন ধারার কবি ? তাঁর কবিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলি দুটি বাক্যে লিখুন।
⬐ ‘সংগীত মাধব’ গোবিন্দ দাসের লেখা।
⬐ তিনি বৈক্ষ্ণব পদাবলী ধারার কবি।
⬐ কবিত্বের বৈশিষ্ট্য :
গোবিন্দদাসের পদে সার্থক শব্দ প্রয়োগ, ঝংকার মুখর ব্রজবুলি ভাষার ব্যবহার, ছন্দের বিস্ময়কর কারুকার্য এবং চিত্রকল্পের নিপুণ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। চরিত্র নির্মাণের নৈপুণ্যে, নাটকীয়তায়, সৌন্দর্যময়তায় তাঁর পদ অনন্য।
৭) ভারতচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম কি ? কটি খন্ড ? খন্ডগুলির নাম লিখুন ।
⬐ ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হল - ‘অন্নদামঙ্গল কাব্য’ ।
⬐ এই গ্রন্থটির তিনটি খন্ড ।
⬐ খন্ডগুলি হল : (i) ‘অন্নদামঙ্গল’ - ‘শিবায়ন’
(ii) ‘কালিকামঙ্গল’ - ‘বিদ্যাসুন্দর’
(iii) ‘অন্নপূর্ণামঙ্গল’ - ‘মানসিংহ’ ।
৮) মুকুন্দ চক্রবর্তীকে কি দুঃখবাদী কবি বলা যায় ?
⬐ আলোচনা :
মুকুন্দর চক্রবর্তী দুঃখবাদী কবি নন, দুঃখ বর্ণনার কবি। জীবনের প্রতি তাঁর কোন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না। বরং জীবনের প্রতি তাঁর যথেষ্ট মমত্ব বোধ ছিল। আর এই জন্যই তিনি জীবনের দুঃখ যন্ত্রণাকে কৌতূক রসে উজ্জীবিত করতে পেরেছেন। তাঁর কাব্য দুঃখ অতিক্রম করার আনন্দ সংগীত ।
৯) । বিজয়গুপ্ত মনসামঙ্গলের কোন্ কবির নাম উল্লেখ করে কাব্য শুরু করেন ? 'বেহুলা' চরিত্র সৃষ্টিতে বিজয়গুপ্তের কৃতিত্ব কতখানি?
⬐ বিজয় গুপ্ত মনসামঙ্গলের আদি কবি ‘কানা হরিদত্ত'র নাম উল্লেখ করে তাঁর কাব্য রচনা করেন।
⬐ বেহুলা চরিত্র সৃষ্টিতে কৃতিত্ত্ব :
⬐ বেহুলা মনসামঙ্গলের এক অসামান্য চরিত্র। সতীত্বে, পতিব্রতায়, মাধুর্যে ও বেদনায় পূর্ণ এই চরিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে বিজয় গুপ্ত তাঁর করুণ রস সৃষ্টির দক্ষতাকে পরিস্ফূট করেছেন।
১০) কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের প্রকৃত নাম ও উপাধি কী? কেন এমন উপাধি?
⬐ কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের প্রকৃত নাম—ক্ষেমানন্দ। তাঁর উপাধি কেতকাদাস।
⬐ এই উপাধির কারণ :
মনসার জন্ম কেয়া পাতায়। তাই তাঁর অপর নাম কেতকা। আর কবি ছিলেন কেতকা অর্থাৎ মনসার দাস বা সেবক। তাই কবি নিজেকে কেতকা দাস হিসাবে পরিচয় দিতেন।
১১) ঘনরাম চক্রবর্তীর কাব্যের নাম লিখুন । কাব্যের অন্য দুটি নাম লিখুন । তাঁর জনপ্রিয়তার দুটি কারণ লিখুন ।
⬐ ঘনরাম চক্রবর্তীর কাব্যের নাম-“শ্রীধর্ম সংগীত” ।
⬐ এটি ‘অনন্ত মঙ্গল’ ও ‘অনাদি মঙ্গল’ নামেও পরিচিত।
⬐ জনপ্রিয়তার কারণ :
তাঁর কাব্যে রাঢ় বাংলার জনজীবন সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। আবার তিনি মঙ্গল কাব্য রচনার কারণ হিসাবে দেবীর স্বপ্নাদেশের কথা উল্লেখ করেননি। সর্বপরি তাঁর ধর্মমঙ্গল কাব্য প্রথম প্রকাশিত হওয়ায় জনপ্রিয় বেশী হয়েছিল।
১২) কৃত্তিবাসের রামায়ণের কটি খণ্ড ও খণ্ডগুলির ক্রম অনুযায়ী নাম লিখুন।
⬐ কৃত্তিবাসী রামায়ণ অর্থাৎ ‘শ্রীরাম পাঁচালি'-র সাতটি খণ্ড।
⬐ খন্ডসমূহ :
1. আদিকাণ্ড,
2. অযোধ্যাকাণ্ড,
3. অরণ্যকাণ্ড,
4. কিস্কিন্ধ্যাকাণ্ড,
5. সুন্দর কাণ্ড,
6. লঙ্কাকাণ্ড,
7. উত্তরকাণ্ড।
১৩) । মালাধর বসু কোন গ্রন্থ রচনা করার জন্য ‘গুনরাজ খাঁ' উপাধি পায়? এই উপাধিতাঁকে কে দেয়? তাঁর কবি প্রতিভা অনধিক দুটি বাক্যে লিখুন।
⬐ মালাধর বসু ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’-গ্রন্থটি রচনা করার জন্য ‘গুণরাজ খাঁ’ উপাধি পায়।
⬐ তৎকালীন গৌড়েশ্বর-রুকনুদ্দিন বরবর শা-এই উপাধি দেয়।
⬐ কবি প্রতিভা :
মালাধর বসুর কবি প্রতিভা রচনা সৌন্দর্যে নয়, ভক্তিভাব প্রকাশে। স্বয়ং চৈতন্যদের তাঁর ভক্তিভাবে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং তিনি আপন কবি প্রতিভায় বৈষ্ণুব সমাজে পুঁজিত হন।
১৪) প্রথম বাংলায় মহাভারত কে অনুবাদ করেন? তাঁর সৃষ্ট কাব্যের নাম কী? তাঁকে কে, কী উপাধি দেন?
⬐ বাংলা ভাষায় প্রথম মহাভারত অনুবাদ করেন-কবীন্দ্র পরমেশ্বর।
⬐ তাঁর সৃষ্ট গ্রন্থের নাম—'পান্ডব বিজয় পঞ্চালিকা' তবে 'পরাগলী মহাভারত হিসাবে বেশী পরিচিত।
⬐ ‘পান্ডব বিজয় পঞ্চালিকা – লেখার জন্য তৎকালিন বাংলার শাসনকর্তা পরাগল খাঁ কবিকে ‘কবীন্দ্ৰ' উপাধি দেয়।
১৫) ‘চৈতন্য ভাগবত’ কার লেখা? কাব্যটির ত্রুটিগুলি কী ?
⬐ চৈতন্য ভাগবত বৃন্দাবন দাসের লেখা।
⬐ কাব্যের ত্রুটি :
(i) চৈতন্য ভাগবত অসমাপ্ত চৈতন্য জীবনী কাব্য,
(ii) গ্রন্থটি অলৌকিকতার নাগপাশে আবদ্ধ।
(iii) বৈষ্ণব বিদ্বেষীদের প্রতি কবির অসহিষ্ণু মনোভাব ও মানসিকতা বৈষ্ণবতার দিক থেকে অসমর্থনীয়।
১৬) বাংলা ভাষায় রচিত শ্রেষ্ঠ চৈতন্য জীবনী গ্রন্থের নাম কী? এটি কার লেখা? কেন তিনি এই গ্রন্থটি লেখেন?
⬐ বাংলা ভাষায় লেখা শ্রেষ্ঠ চৈতন্য জীবনি রচয়িতা—কৃষ্ণদাস কবিরাজ।
⬐ তাঁর লেখা গ্রন্থের নাম—“শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত”।
⬐ গ্রন্থ রচনার কারণ :
লেখকের পূর্বে বৃন্দাবন দাস ‘চৈতন্যভগবত’–লিখলেও এখানে শ্রীচৈতন্যের শেষ জীবন মাত্র ১০-টি অধ্যায় শেষ হয়েছে। অর্থাৎ চৈতন্যের শেষ জীবন সংক্ষিপ্ত। এই ত্রুটি দূর করার জন্য তিনি কাব্যটি লেখেন।
১৭) আরাকান রাজসভার বয়ঃজেষ্ঠ কবি কে? তাঁর কাব্যের নাম কী? কাব্যটির রচনাকাল নির্দেশ করুন। তিনি কাব্যটি সমাপ্ত করেছিলেন কী?
⬐ আরাকান রাজসভার বয়: জেষ্ঠ কবি দৌলত কাজী।
⬐ তাঁর রচিত কাব্যের নাম সতীময়না।
⬐ কাব্যটি ১৬২১–১৬৩৮ খ্রিঃ রচিত।
⬐ তিনি কাব্যটির অংশ রচনা করেছিলেন।
১৮) ‘পদ্মাবতী’ - কার পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত ? এটি কোন শ্রেণীর গ্রন্থ ? গ্রন্থটি কার কোন গ্রন্থের অনুবাদ ?
⬐ আরাকান রাজ্যের মন্ত্রী মগন ঠাকুরের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘পদ্মাবতী’ রচিত।
⬐ কাব্যটি—ইতিহাস মিশ্রিত রোমান্টিক প্রেমাখ্যান কাব্য।
⬐ মুহম্মদ জায়সির হিন্দি ‘পদুমাবৎ’—অবলম্বনে এটি রচিত।
১৯) শ্রেষ্ঠ শাক্ত পদকর্তা কে ? কেন ?
⬐ শ্রেষ্ঠ শাক্তপদকর্তা হলেন সাধক রামপ্রসাদ সেন।
⬐ বলার কারণ :
রামপ্রসাদ ভাব তন্ময় ও আত্মমগ্ন পদকর্তা। তিনি সহজ-সরল ভাষায় পদ রচনা করতেন এবং তাঁর পদাবলীর বহিঃরঙ্গ অলংকারহীন। কিন্তু তাঁর পদের বাণী অস্তোৎসারিত এবং আমাদের প্রাণের মূলকে নাড়া দিয়ে যায়। বিশেষ করে ভক্তের আকুতি পর্যায়ে পদগুলি আজও বিভিন্ন পূজামণ্ডপে শ্রদ্ধা ও ভক্তির সহিত গাওয়া হয়।
২০) বর্ধমান জেলার কালনা গ্রামের কবি কে? তাঁর আবির্ভাব কাল কত ? তাঁর লিখিত গ্রন্থের নাম কী? তা কোন সময়ে লেখা ?
⬐ বর্ধমান জেলার কালনা গ্রামে শাক্ত পদকর্তা কমলাকান্তের জন্ম ।
⬐ উনবিংশ শতাব্দী তাঁর আবির্ভাব কাল ।
⬐ তাঁর লিখিত গ্রন্থের নাম ‘সাধকরঞ্জন’ ।
⬐ কাব্যটি উনবিংশ শতাব্দীতে লেখা ।
No comments