Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

রবীন্দ্র কাব্য পরিক্রমা (পর্ব - ০২) :

রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভা বিস্ময়কর। তার বিচিত্র চিন্তা ও কর্মের প্রবাহ, বিচিত্র প্রকাশের মধ্যে, তাঁর সাহিত্য রচনায়, বিচারে ও ব্যাখ্যানে যে ...


রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভা বিস্ময়কর। তার বিচিত্র চিন্তা ও কর্মের প্রবাহ, বিচিত্র প্রকাশের মধ্যে, তাঁর সাহিত্য রচনায়, বিচারে ও ব্যাখ্যানে যে পরিচয়টি আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়, তা হল তার কবিপ্রকৃতি। এই কবিপ্রকৃতি সীমার সঙ্গে অসীমের, খণ্ডের সঙ্গে পূর্ণের, ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে বিশ্বজীবনের চিরন্তন প্রবাহের মধ্যে তিনি আকণ্ঠ ডুব দিয়েছেন ও সেই অভিজ্ঞতাকে ব্যক্ত করেছেন। জগৎকে তিনি দেখেছেন ঋষিসুলভ অখণ্ড দৃষ্টিতে যার মাধ্যমে আনন্দরূপকে উপলব্ধি করেছেন। জীবনস্মৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, 
“সেই জগৎকে আর কেবল ঘটনাপূর্ণ বস্তুপূর্ণ করিয়া দেখা গেল না, তাহাকে আগাগোড়া পরিপূর্ণ দেখিলাম।” 
‘রবীন্দ্র কাব্য পরিক্রমা’ (পর্ব - ০১) তে আমরা রবীন্দ্রনাথেরে কাব্যের ‘সূচনা’ ও ‘উন্মেষ’ পর্ব সম্পর্কে জেনেছি । আজ আমরা ‘ঐশ্বর্য’, অর্ন্তবর্তী’, ও ‘গীতাঞ্জলি’ পর্ব সম্পর্কে জানবো ।
     আরো পড়ুন :              রবীন্দ্র কাব্য পরিক্রমা (পর্ব - ০১)        

   [3] ‘ঐশ্বর্য’ পর্ব (১৮৯০ - ৯৬ খ্রি.):   

   সময়কাল :    ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছয় বৎসরের মধ্যে কবির যে কাব্যগুলি প্রকাশিত হয়, সেই কাব্যগুলির সময় কালকে ‘ঐশ্বর্য পর্ব' আখ্যা দিতে পারি ।

  কাব্যগ্রন্থ :  
  • ‘মানসী’ (১৮৯০),
  • ‘সোনার তরী’ (১৮৯৪),
  • ‘চিত্রা’ (১৮৯৬),
  • ‘চৈতালী‘(১৮৯৬),
  • ‘নদী’ (১৮৯৬) ।

   মনে রাখার কৌশল :    ‘ঐশ্বর্য’ পর্বে :  মানসী সোনার তরীতে চেপে সান্ধ্য ভ্রমনে বেরিয়েছিলেন । একা একা ভালো লাগবে না বলে বান্ধবী চিত্রা ও চৈতালীকে সাথে নিয়েছিলেন । সান্ধ্য পরিবেশে নদীর শোভ ছিল মনোরম ।
মানসী = ‘মানসী’ (১৮৯০),
সোনার তরীতে = ‘সোনার তরী’ (১৮৯৪),
চিত্রা = ‘চিত্রা’ (১৮৯৬),
চৈতালীকে =  ‘চৈতালী‘(১৮৯৬),
নদীর = ‘নদী’ (১৮৯৬) ।

  আলোচনা :  

    (১) ‘মানসী’ :    
  • মানসী রবীন্দ্রনাথের যৌবনকালের কাব্যগ্রন্থ ।
  • কাব্যটি ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যের বেশকিছু কবিতা কবি গাজিপুরে রচনা করেন ।
  • এই কাব্যের প্রথম কবিতা - ‘পত্র’ ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘মেঘদূত’ , ‘অহল্যার প্রতি’ ।

   (২) ‘সোনার তরী’ :   
  • বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক কাব্য ।
  • কাব্যটি ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ।
  • কাব্যটি কবি দেবেন্দ্রনাথ সেন উৎসর্গ করেন ।
  • এই কাব্যে কবির প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ লক্ষ্য করা যায় ।
  • এই কাব্যে ৪৩টি কবিতা রয়েছে ।
  • এই কাব্যের প্রথম কবিতা - ‘সোনার তরী’ ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘বসুন্ধরা’, ‘সমুদ্রের প্রতি’, ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’।

   (৩) ‘চিত্রা’ :  
  • কাব্যটি ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যে কবিতার সংখ্যা ৩৬টি ।
  • এই কাব্যগ্রন্থের ২২টি কবিতা ইংরাজিতে অনুদিত হয়েছে ।
  • কাব্যটি কবি কাউকে উৎসর্গ করেন নি ।
  • এই কাব্যের প্রথম কবিতা - ‘চিত্রা’ (সুকুমার সেনের মতে - সুুখ’) ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘জীবন দেবতা’, ‘ব্রাহ্মণ’ , সিন্ধুপারে’।

   (৪) ‘চৈতালী’ :    
  • কাব্যটি ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যের অধিকাংশ কবিতাগুলি চৈত্রমাসে পাতিসরে লেখা ।
  • এই কাব্যে কবিতার সংখ্যা ৭৮টি ।
  • কবির জীবনান্ত এই কাব্যে আভাষিত ।
  • এই কাব্যের প্রথম কবিতা - ‘প্রভাত’ ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘বনে রাজ্যে’, ‘সভ্যতার প্রতি’, ‘বন’, ‘তপোবন’।

  (৫) ‘নদী’ :    
  • কাব্যটি ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যটি বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গ করেন । 


     ‘ঐশ্বর্য পর্বের’ কাব্যের বৈশিষ্ট্য :      
        ‘ঐশ্বর্য পর্ব (১৮৮৬-৯৬ খ্রি.):  এর বিখ্যাত কাব্য - 'মানসী', 'সোনার তরী', 'চিত্রা', 'চৈতালি'। এই পর্বের কাব্যের  কবিতাগুলির মধ্যে রবীন্দ্রনাথের কাব্য-দর্শনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 'জীবনদেবতা' তত্ত্বের সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়।


   [4] ‘অর্ন্তবর্তী’ পর্ব (১৮৯৯ - ১০খ্রি.):   

   সময়কাল :    ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এগারো বৎসরের মধ্যে কবির যে কাব্যগুলি প্রকাশিত হয়, সেই কাব্যগুলির সময় কালকে ‘অর্ন্তবর্তী পর্ব' আখ্যা দিতে পারি ।

  কাব্যগ্রন্থ :  
  • ‘কণিকা’ (১৮৯৯),
  • ‘কথা’ (১৯০০),
  • ‘কাহিনী’ (১৯০০),
  • ‘ক্ষণিকা’ (১৯০০),
  • ‘কল্পনা’ (১৯০০),
  • ‘নৈবেদ্য’ (১৯০১),
  • ‘স্মরণ’ (১৯০৩),
  • ‘শিশু’ (১৯০৩),
  • ‘খেয়া’ (১৯০৬),
  • ‘উৎসর্গ’ (১৯১৪)

   মনে রাখার কৌশল :    ‘অর্ন্তবর্তী’ পর্বে :  কণিকা কথা কাহিনী পড়তে পড়তে ক্ষনিকের জন্য কল্পনা করে, সে দেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য সাজিয়ে দেবতাকে স্মরণ করছে । দেবতাও তার ডাকে সারা দিতে শিশুর বেশে খেয়া নৌকায় করে আসছে । দেবতা দর্শনে জীবন ধন্য মনে করে কনিকা  নিজেকে উৎসর্গ করেছে দেবতার চরণে ।
কণিকা = ‘কণিকা’ (১৮৯৯),
কথা = ‘কথা’ (১৯০০),
কাহিনী = ‘কাহিনী’ (১৯০০),
ক্ষনিকের = ‘ক্ষণিকা’ (১৯০০),
কল্পনা করে = ‘কল্পনা’ (১৯০০),
নৈবেদ্য সাজিয়ে = ‘নৈবেদ্য’ (১৯০১),
স্মরণ করছে = ‘স্মরণ’ (১৯০২),
শিশুর বেশে = ‘শিশু’ (১৯০৩),
খেয়া নৌকায় = ‘খেয়া’ (১৯০৬)
উৎসর্গ করেছে = ‘উৎসর্গ’ (১৯১৪)

  আলোচনা :  

    (১) ‘কণিকা’ :    
  • রবীন্দ্রনাথের অর্ন্তবর্তী পর্বের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ।
  • কাব্যটি ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • ছোট কবিতা গ্রন্থ 
  • এই কাব্যের কবিতার সংখ্যা - ১১০টি ।
  • প্রমথনাথ রায়চৌধুরীকে কাব্যটি উৎসর্গ করেন ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘নিন্দুকের দুরাশা’ , ‘নদীর প্রতি খাল’ ।

   (২) ‘কথা’ :   
  • বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক কাব্য ।
  • কাব্যটি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ।
  • কাব্যটি কবি শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে উৎসর্গ করেন ।
  • এই কাব্যে ২৪টি কবিতা রয়েছে ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘পূজারিনী’, ‘নগরলক্ষী’, ‘রাজবিচার’।


   (৩) ‘কাহিনী’ :  
  • কাব্যটি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যে কবিতার সংখ্যা ৮টি ।
  • এই কাব্যগ্রন্থের ২২টি কবিতা ইংরাজিতে অনুদিত হয়েছে ।
  • কাব্যটি কবি শ্রীল শ্রীযুক্ত রাধাকিশোর দেবমাণিক্য মহারাজ ত্রিপুরেশ্বরকে উৎসর্গ করেন ।
  • এই কাব্যের প্রথম কবিতা - ‘কত কি যে আসে’ ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘দুই বিঘা জমি’, ‘নিস্ফল উপহার’ ‘দীনদান’।


   (৪) ‘ক্ষণিকা’ :    
  • কাব্যটি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যের অধিকাংশ কবিতাগুলি শিলাইদহে লেখা ।
  • এই কাব্যে কবিতার সংখ্যা ৫৯টি ।
  • কবির জীবনান্ত এই কাব্যে আভাষিত ।
  • এই কাব্যের প্রথম কবিতা - ‘উদ্বোধন’ ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘যথাসময়’, ‘বোঝাপড়া’, ‘অচেনা’, ‘বিদায়’।

    (৫) ‘কল্পনা’ :    
  • ‘স্বদেশী’ আন্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রভাব এই কাব্যে রয়েছে ।
  • কাব্যটি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যে কবিতার সংখ্যা ৪৯টি ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘ভারতলক্ষী’ , ‘হতভাগ্যের গান’, ‘বঙ্গলক্ষী’ ।

   (৬) ‘নৈবেদ্য’ :   
  • গীতিধর্মী কাব্য ।
  • কাব্যটি ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ।
  • কাব্যটি কবি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গ করেন ।
  • এই কাব্যে প্রানাশের সাথে কবির নিবিড়তর আসক্তির কথা চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে ।
  • এই কাব্যের ১৫টি কবিতাকে কবি গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ ‘Song Offerings’ এ অন্তর্ভুক্ত করেছেন ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘শতাব্দীর সূর্য আজি রক্ত মেঘ মাঝে অস্ত গেল’, ‘বৈরাগ্য সাধনে মুেক্তি সে আমার নয়’ । 

   (৭) ‘স্মরণ’ :  
  • কবির পত্নী মৃণালিণী দেবীর মৃত্যুর শোক বেদনা ্এই কাব্যে প্রতিফলিত হয়েছে ।
  • কাব্যটি ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যের প্রথম তিনটি কবিতা ‘মরণ’ পর্যায়ের ।
  • এই কাব্যের কবিতাগুলিকে অনেকে শোক কবিতা বলেছেন।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘মিলন’, ‘বসন্ত’ , ‘সম্ভোগ’।

   (৮) ‘শিশু’ :    
  • কাব্যটি ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • কবি মাতৃহারা শিশুকে আনন্দ দেবার জন্য এই কাব্য রচনা করেন ।
  • এই কাব্যের ৩টি কবিতাকে কবি গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ ‘Song Offerings’ এ অন্তর্ভুক্ত করেছেন ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘জন্মকথা’, ‘খেলা’ , ‘খোকা’, ‘প্রশ্ন’, ‘ঘুমচোরা’।

   (৯) ‘খেয়া’ :  
  • বর্তমান জীবনের  ব্যাথা - বেদনা, আশা - নিরাশার মধ্য দিয়ে আগামী জীবনের পূর্ণতার দ্যানস্তব্ধ আত্মমুখী প্রতিক্ষা - ‘খেয়া’ কাব্য ।
  • ১৩১২ বঙ্গাব্দে কবি এই কাব্যের কবিতাগুলি লিখতে শুরু করেন ।
  • কাব্যটি ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যের মূল সুর শোনা যায় - ‘পথের শেষ’ কবিতায় ।
  • এই কাব্যে কবি ভাবের জগতে নবজন্ম লাভ করেছিলেন ।
  • কাব্যটি জগদীশচন্দ্র বসুকে উৎসর্গ করেন ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘ঘাটের পথ’, ‘দীঘি’ , ‘সবদেশ পেরিয়ে’ ইত্যাদি।


   (১০) ‘উৎসর্গ’ :    
  • কাব্যটি ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • রবীন্দ্রনাথ কাব্যগ্রন্থের ২৮টি শ্রেণীর প্রত্যেকটির বিশেষ প্রবেশ রূপে ২৮টি কবিতা লিখেছিলেন । এই কবিতাগুলি নিয়ে অনেককাল পরে উৎসর্গ প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘যে গন্ধ কাঁপে ফুলের বুকের কাছে’, ‘কত প্রিয় মুখের ছায়া’।

     ‘অর্ন্তবর্তী পর্বের’ কাব্যের বৈশিষ্ট্য :      
       এই পর্বে প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি কবি আকর্ষিত হয়েছেন।   স্বদেশ ও স্বদেশ মহিমা সম্বন্ধে প্রার্থনা উচ্চারিত হয়েছে বেশ কয়েকটি কবিতায়। এবং তা মহান আদর্শে বাঁধা। তবে কোন রাষ্ট্রীয় অথবা অর্থনৈতিক স্বর্গের প্রার্থনা কবি কোথাও করেন নি। তিনি প্রার্থনা করেছেন উন্নত মানব মহিমার স্বর্গ, যে স্বর্গে মানবের চিত্ত ভয়শূন্য, মানুষের শির অবনত, জ্ঞান যেখানে মুক্ত। 



  [5] ‘গীতাঞ্জলি পর্ব (১৯১০ - ১৪ খ্রি.):   

   সময়কাল :    ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চার বৎসরের মধ্যে কবির যে কাব্যগুলি প্রকাশিত হয়, সেই কাব্যগুলির সময় কালকে ‘গীতাঞ্জলি পর্ব' আখ্যা দিতে পারি ।

  কাব্যগ্রন্থ :  
  • গীতাঞ্জলি’ (১৯১০),
  • ‘গীতিমাল্য’ (১৯১৪),
  • ‘গীতালী‘(১৯১৪)

   মনে রাখার কৌশল :    ‘গীতাঞ্জলি’ পর্বে :  গীতাঞ্জলী, গীতিমাল্য ও গীতালী ছিল গানের সংকলন ।
গীতাঞ্জলি = ‘গীতাঞ্জলি’ (১৯১০),
গীতিমাল্য = ‘গীতিমাল্য’ (১৯১৪),
গীতালী = ‘গীতালী‘(১৯১৪)

  আলোচনা :  

    (১) ‘গীতাঞ্জলি’ :    
  • ‘গীতাঞ্জলি’র কবিতাগুলি গান ও কবিতার মিশ্রন ।
  • কাব্যটি ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • ১৯১৩ সালে সুইডিস অ্যাকাডেমি ‘গীতাঞ্জলি’র ইংরাজী গদ্যানুবাদ ‘Song Offerings’ এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পান । 
  • ‘Song Offerings’ এ ‘গীতাঞ্জলি’ ছাড়াও ‘খেয়া’, ‘নৈবেদ্য’, ‘গীতিমাল্য’ প্রভৃতি কাব্য থেকে কবিতা নেওয়া হয়েছিল ।
  • Song Offering -এর ভূমিকা লেখেন এবং সম্পাদনা করেন - ইংরেজ কবি W.B Yeats.
  • এই কাব্যে ১৫৭টি গান ও কবিতা রয়েছে ।
  • গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি ইতালিয় ভাষায় অনুবাদ করেন - ফাদার মারিনো রিগান

   (২) ‘গীতিমাল্য’ :   
  • গীতিমূলক কাব্য ।
  • কাব্যটি ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ।
  • এই কাব্যের ৩টি কবিতাকে কবি গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ ‘Song Offerings’ এ অন্তর্ভুক্ত করেছেন ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘অনেক কালের যাত্রা আমার’, ‘আজিকে এই সকাল বেলাতে’ ইত্যাদি।

   (৩) ‘গীতালী’ :  
  • কাব্যটির শেষ দুটি রচনা ছাড়া সবই গান ।
  •  কাব্যটি ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
  • এই কাব্যের গানগুলিতে শান্তি ও সার্থকতার সুর ধ্বনিত ।
  • এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা - ‘জীবনের পথ দিনের প্রান্তরে এসে’, ‘হে মোর অতিথি যত’ ইত্যাদি।

     ‘গীতাঞ্জলী পর্বের’ কাব্যের বৈশিষ্ট্য :      
        “গীতাঞ্জলি পর্বের বৈশিষ্ট্য বিচার করে একে রবীন্দ্র কবি-জীবনের অধ্যাত্মপর্বও আখ্যা দেওয়া যায় । কারণ এই তিনখানি গীতিসংগ্রহের মূলকথা কবির সঙ্গে তার ঈশ্বরচেতনার অঙ্গাঙ্গী সম্বন্ধ । এই পর্বের কাব্যগুলির কবিতাতে শান্তি ও সার্থকতার সুর ধ্বনিত ।

                                     আরো পড়ুন :              রবীন্দ্র কাব্য পরিক্রমা (পর্ব - ০৩)        

No comments