Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

অভিসারের কবি গোবিন্দদাসঃ

ব্রজবুলি ভাষায় যে সমস্ত বাঙালী কৰি বৈষ্ণব পদ বচনায় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় রয়েছে গোবিন্দদাস ...

ব্রজবুলি ভাষায় যে সমস্ত বাঙালী কৰি বৈষ্ণব পদ বচনায় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় রয়েছে গোবিন্দদাস কবিরাজের। তিনি চৈতন্য উত্তর যুগের শ্রেষ্ঠ পদকর্তা । সমালোচকগণ তাকে বিদ্যাপতির ভাবশিষ্য বলে বলেছেন। দ্বিতীয় বিদ্যাপতি নামেও তিনি খ্যাত। ‘দুঃখেনুষ্ঠিমনাঃ সুখে বিগতস্পৃহঃ সাধক’।

     জন্মসনঃ    
(1) বৈষ্ণব শাস্ত্রবেত্তা জগদ্বন্ধু ভদ্র বলেছেন ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে কবির জন্ম। এবং ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি লোকান্তরিত হন।
(2) কৃষ্ণদাস কবিরাজের 'চৈতন্যচরিতামৃত' গ্রন্থের আদি লীলায় ১১ দশ পরিচ্ছেদে নিত্যানন্দের শিষ্য বলে গোবিন্দদাস কবিরাজ ও রামচন্দ্র কবিরাজের নামোল্লেখ আছে। নিত্যানন্দ ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের পরে জীবিত ছিলেন না। সেক্ষেত্রে ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে গোবিন্দদাসের জন্ম ধরা যেতে পারে।


    জন্মস্থানঃ    
         অনুমান করা হয় - বর্ধমান জেলার শ্রীখণ্ড গ্রামে মাতামহ সঙ্গীত দামোদর' গ্রন্থ প্রণেতা দামোদরের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন।

    পরিচয়ঃ     
* গোবিন্দদাসের পিতার নাম চিরঞ্জীব।
* মাতার নাম সুনন্দা দেবী।
* তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন কবি কবিরাজ রামচন্দ্র।
* গোবিন্দ দাসের পত্নীর নাম ছিল মহামায়া ।
* পুত্রের নাম দিব্যসিংহ।

    পদ পরিচয়ঃ    
গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ    ➤ 
নীরদ নয়নে নীর ঘন সিঞ্চনে’
                                   ➤ ‘বরণ আশ্রম কিন অকিঞ্ছন’

গৌরচন্দ্রিকাঃ   ‘চম্পক শোন কুসুম কনকাচল / জিতেল গৌর তনু লাবণিরে।’
                        ➤ ‘বিপুল পুলককুল আকুল কলেবর /পরগর অন্তর প্রেমভরে।’

পূর্বরাগঃ   ‘ঢল ঢল কাঁচা অঙ্গের লাবনি / অবনী বাহিয়া যায় ।’        
                ‘যাঁহা যাঁহা নিকসয়ে তনু তনু জ্যোতি’
              ➤ ‘রূপের ভরল দিঠি- সোঙারি পরশ মিঠি / পুলক না তেজই অঙ্গ ।’

অভিসারঃ      ‘কণ্টক গাড়ি কমল সম পদতল’                   
                      ‘মন্দির বাহির কঠিন কপাট’
                      ‘মাধব কি কহব দৈব-বিপাক’               
                      ‘একে কুলকামিনী তাহে কুহু যামিনী’

মাথুরঃ       ‘মো যদি জানিতম, পিয়া যাবেরে ছাড়িয়া’
                  
‘গুণনিধি যদি প্রেম হামে ছোড়’

    দ্বিতীয় বিদ্যাপতিঃ     
            চৈতনোত্তর যুগের শ্রেষ্ঠ পদকর্তা গোবিন্দদাস কবিরাজকে ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ অভিধায় ভুষিত করেছিলেন বল্লভ দাস । তিনি বলেন —
“ব্রজের মধুরলীলা, যা শুনি দরবে শিলা, রচিলেন কবি বিদ্যাপতি। তাহা হৈতে নহে ন্যূন, গোবিন্দের কবিত্বগুন, গোবিন্দ দ্বিতীয় বিদ্যাপতি” ।
    পদকর্তা গোবিন্দদাসের কৃতিত্বঃ     
(1) গোবিন্দদাস ছিলেন যুগপৎ কবি ও সাধক।
(2)বৈষ্ণবীয় ধর্মদর্শন ও অলংকারশাস্ত্রে তিনি জ্ঞান অর্জন করেন।
(3) ভক্তিধর্ম ও কবিকল্পনার আধারে রচিত বলেই তাঁর পদগুলি তত্ত্বাদর্শে ও জীবনরসে অপূর্ব কাব্যশ্রী মণ্ডিত হয়ে উঠেছে।


    পদাবলীর বৈশিষ্ট্যঃ    
ক) ভাষা, ছন্দ, অলংকারের নিপুণ ব্যবহার গোবিন্দ দাসের পদে সুনিপুনভাবে বিনস্ত হয়েছে ।
খ) গোবিন্দদাসের পদে সৌন্দর্যময়তা, নাটকীয়তা নিপুণভাবে ফুটে উঠেছে ।
(গ) গোবিন্দদাসের সৌন্দর্যপ্রীতি অসামান্য। রাধিকাকে তিনি তিল তিল করে সৌন্দর্যসমাহারে তিলোত্তমা করে তুলেছেন।



এক নজরে গোবিন্দ দাস


1. চৈতন্য উত্তর যুগের শ্রেষ্ঠ পদকর্তা গোবিন্দদাস ।
2. গোবিন্দদাস পঞ্চদশ মতকের দ্বিতীয়ার্ধে জন্মগ্রহন করেন ।
3.  বৈষ্ণব শাস্ত্রবেত্তা জগদ্বন্ধু ভদ্র বলেছেন ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে কবির জন্ম। এবং ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি লোকান্তরিত হন।
4. অনুমান করা হয় পঞ্চদশ মতকের দ্বিতীয়ার্ধে  বর্ধমান জেলার শ্রীখন্ড গ্রামে মাতামহ দামোদর সেনের গৃহে জন্মগ্রহন করেন ।
5. গোবিন্দ দাসের মাতামহ দামোদর সেন ‘সঙ্গীত দামোদর’গ্রন্থ রচনা করেন ।
6. গোবিন্দদাসের পিতা চিরঞ্জীব, মাতা হলেন সুনন্দা দেবী এবং জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন রামচন্দ্র ।
7. গোবিন্দদাসের পত্নীর নাম ছিল মহামায়া ।
8. সমালোচকগণ গোবিন্দদাসকে বিদ্যাপতির ভাবশিষ্য বলেছেন ।
9. গোবিন্দদাসকে বিদ্যাপতির যোগ্য উত্তরসূরী বলা হয় ।
10. শ্রীজীব গোস্বামী গোবিন্দদাসকে ‘কবিরাজ’উপাধি দিয়েছিলেন ।
11. বল্লভ দাস গোবিন্দদাসকে ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ বলেছেন ।
12. অভিসার পর্যায়ের পদ রচনায় গোবিন্দদাস শ্রেষ্ঠ ।
13. গোবিন্দদাসের পদে বাংলার শাসনকর্তা রাজা প্রতাপাদিত্যের নাম পাওয়া যায় ।
14. গোবিন্দদাসের লেখা নাটকের নাম ‘সঙ্গীত মাধব’ ।
15. অনুমান করা হয় গোবিন্দদাস প্রথম জীবনে শাক্ত ধর্মমতে বিশ্বাসী ছিলেন ।
16. গোবিন্দদাস বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন শ্রীনিবাস আচার্যের কাছ থেকে ।
17.পদ কল্পতরু’তে গোবিন্দদাসের ভূমিকায়  ৪০৬টি পদ পাওয়া যায় ।

No comments