কল্লোল যুগের একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক হলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। কল্লোল যুগের শিল্পী হ...
কল্লোল যুগের একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক হলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। কল্লোল যুগের শিল্পী হয়েও তিনি তাঁর কাব্য ও কথাসাহিত্যে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন সমস্যাকে রূপ দিয়েছেন। নতুন যুগের সংশয়-অবিশ্বাস, বিদ্রোহ-বিক্ষোেভ তাঁর সাহিত্যে ধরা পড়েছে।
পরিচিতিঃ
জন্ম ১৯০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাশিতে। পৈতৃক নিবাস দক্ষিণ চবিবশ পরগণার বৈকুণ্ঠপুরে। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র ভারতীয় রেলওয়াতে চাকরি করতেন। মাতার নাম সুহাসিনী দেবী। মাতা সুহাসিনী দেবী কবির শৈশবেই পরলোক গমন করলে,তাঁর শৈশব কাটে মির্জাপুরে তাঁর মাতুলালয়ে। তাঁদের বাড়ী ছিল ২৪পরগণা জেলার ( অধুনা দক্ষিণ ২৪পরগণা ) রাজপুরে। প্রেমেন্দ্র মিত্র কলকাতার সাউথ সাবার্বন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯২০) পাস করে সাহিত্য-সাধনায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন। কর্মজীবন শুরু করেন দীনেশচন্দ্র সেনের সহায়তায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রামতনু লাহিড়ী রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। পরে সুভাষচন্দ্র বসুর “বাংলার কথা” পত্রিকা, “ফরওয়ার্ড” পত্রিকা, “বঙ্গশ্রী” পত্রিকা ও “বেঙ্গল ইউনিটিতে” বিজ্ঞাপনের কপি-লেখক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর মৃত্যু কলকাতায়, ৩ মে ১৯৮৮।
ছদ্মনাম : কৃত্তিবাস ভদ্র।
প্রথম রচনাঃ
⇛ কবির প্রথম কবিতার বই ‘প্রথমা’ প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে।
⇛ প্রথম গান --- “আকাশরূপী হে মহাকাল”।
⇛ ১৯২৪ সালে প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্প “শুধু কেরানী”।
⇛ তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি “সমাধান” ।
⇛ “ঘনাদা”-কে নিয়ে তাঁর প্রথম গল্প “মশা” প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ সালে ।
⇛ আকাশবাণীর উদ্যোগে লিখিত ‘সবুজ মানুষ‘ নামে একটি চার অধ্যায়ের বারোয়ারি কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর প্রথম অধ্যায় রচনা করেন প্রেমেন্দ্র মিত্র।
উল্লেখযোগ্য কাব্য:
(১) ‘প্রথমা’ (১৯৩২),
(২) ‘সম্রাট’ (১৯৪০),
(৩) ‘সাগর থেকে ফেরা’ (১৯৫৬),
(৪) ‘ফেরারী ফৌজ’ (১৯৫৮),
(৫) ‘হরিণ চিতা চিল’ (১৯৫৯),
(৬) ‘কখনো মেঘ’ (১৯৬১),
(৭) ‘অথবা কিন্নর’ (১৯৬৫),
(৮) ‘নদীর নিকটে’ (১৯৭২);
গল্পগ্রন্থ :
(১) ‘পঞ্চশর’ (১৯২৯),
(২) ‘বেনামী বন্দর’ (১৯৩০),
(৩) ‘পুতুল ও প্রতিমা’ (১৯৩২),
(৪) ‘মৃত্তিকা’ (১৯৩২),
(৫) ‘অফুরন্ত’ (১৯৩৫),
(৬) ‘মহানগর’ (১৯৩৭),
(৭) ‘ধূলিধূসর’ (১৯৩৮),
(৮) ‘নিশীথ নগরী’ (১৯৩৮),
(৯) ‘কুড়িয়ে ছড়িয়ে’ (১৯৪৬),
(১০) ‘সামনে চড়াই’ (১৯৪৭),
(১১) ‘প্রেমেন্দ্র মিত্রের শ্রেষ্ঠগল্প’ (১৯৫২),
(১২) ‘সপ্তপদী’ (১৯৫৫),
(১৩) ‘জল পায়রা’ (১৯৫৭),
(১৪) ‘নানা রঙে বোনা’ (১৯৬০);
উপন্যাস :
(১) ‘পাঁক’ (১৯২৬),
(২) ‘কুয়াশা’ (১৯৩০),
(৩) ‘মিছিল’ (১৯৩৩),
(৪) ‘উপনয় ‘ (১৯৩৩),
(৫) ‘আগামীকাল’ (১৯৩৪),
(৬) ‘প্রতিশোধ’ (১৯৪১),
(৭) ‘প্রতিধ্বনি ফেরে’ (১৯৬১),
(৮) ‘অন্য এক নাম’ (১৯৬২),
(৯) ‘পা বাড়ালেই রাস্তা’ (১৯৬২),
(১০) ‘পতাকা যারে দাও’ (১৯৬৩),
(১১) ‘স্তব্ধ প্রহর’ (১৯৬৩),
(১২) ‘মনুদ্বাদশ’ (১৯৬৪),
(১৩) ‘অমলতাস’ (১৯৬৫),
(১৪) ‘স্বপ্নতনু’ (১৯৬৫),
(১৫) ‘দিগ্বলয়’ (১৯৬৭),
(১৬) ‘যিনি বিধাতা’ (১৯৭০),
(১৭) ‘সেই যে শহর রাজোলি’ (১৯৭২)।
সম্পাদিত পত্রিকা :
(১) “রঙমশাল” (১৯৩১),
(২) কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে “নিরুক্ত”,
(৩) কবি বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে “কবিতা” (১৯৩৫)
(৪) “কালিকলম”,
(৫) “নবশক্তি” (১৯৩৬),
(৬) “পক্ষিরাজ” ।
উল্লেখযোগ্য গল্প : “বেনামী বন্দর” (১৯৩০), “পুতুল ও প্রতিমা” (১৯৩২),“পোনাঘাট পেরিয়ে”, “সাগর সঙ্গম”, “পুন্নাম”, “তেলেনাপোতা আবিষ্কার”, “হয়তো”, “স্টোভ” প্রভৃতি। “
অন্যান্যঃ
⇛ সৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্র : ঘনাদা, “মামাবাবু”, ডিটেকটিভ “পরাশর বর্মা” ওবং ভুত শিকারী “মেজোকর্তা”।
⇛ প্রেমেন্দ্র মিত্র `সাগর থেকে ফেরা' কাব্যগ্রন্থটির জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার তিনি লাভ করেন।
⇛ প্রেমেন্দ্র মিত্র কল্লোল (১৯২৩) পত্রিকার একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন। পরে মুরলীধর বসুর সহযোগিতায় কালিকলম (১৯২৬) পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
⇛ শিশু সাহিত্য পরিষদের ভুবনেশ্বরী পদক (১৩৭৮), দেশিকোত্তম উপাধি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের হরনাথ ঘোষ পদক (১৯৮১) প্রভৃতি সম্মাননা ও উপাধিতে তাঁকে সম্মানিত করা হয়।

No comments